আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা খেদমত মহান আল্লাহর এক অশেষ এবং অবারিত নিয়ামত মুমিন মুসলমানদের জন্য। আল্লাহর কাছে সাততবক আসমান-যমীনের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় তাঁর দ্বীন ইসলাম এবং সেই ইসলামের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সেবক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। রাসুলেপাক (সাঃ) মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর এ দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যয় করেছেন নিজের সারা জীবনের সম্পূর্ণ সময়, তাঁর জ্যোতির্ময় এল্মে শরীয়ত ও মারেফতের জ্ঞান, তাঁর সমস্ত সম্পদ, তাঁর বরকতময় শারীরিক শ্রম (জিহাদ, সফর, ইবাদত ইত্যাদি) এবং মানবিক উৎকর্ষতাগুলো। দয়াল নবী (সাঃ)-এর এ সর্বোচ্চ দান এবং অনুকরণীয় খেদমত ও ত্যাগ-তিতিক্ষা পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কারো সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। তিনি অভাবহীন ও অমুখাপেক্ষী আল্লাহর মহব্বতে দ্বীন ইসলাম প্রচার এবং প্রসারের স্বার্থে নিজের আরাম-আয়েশ, ধন-সম্পদ এবং জীবনের মায়া পদদলিত করেছেন এবং এ শিক্ষাই তিনি তাঁর সাহাবী (রাঃ) গণকে ও ভবিষ্যৎ উম্মতকে দিয়েছেন। রাসুলেপাক (সাঃ)-এর উচ্চ মর্যাদার কারণে পূর্ববর্তী নবী-রাসুল (আঃ) গণও এ পৃথিবীতে নবী-রাসুল হিসেবে না এসে নবী করিম (সাঃ)-এর একজন সাধারণ উম্মত হয়ে আসার জন্য আল্লাহর কাছে আর্জির কথাও আমরা জানি। সুতরাং যে দ্বীন ইসলাম মহিমান্বিত আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ধর্ম; যে দ্বীন ইসলামের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেদমতকারী প্রথম সৃষ্টি নূরনবী হুজুরেপাক (সাঃ); যে দ্বীন ইসলামের জন্য সাহাবী (রাঃ) গণ হাসিমুখে রাসুল (সাঃ)-এর খেয়ালে কালেমা পড়তে পড়তে তাঁদের প্রিয় পরিবার, ধন-সম্পদ ও জীবন কোরবানী করেছেন; যে দ্বীন ইসলামের একজন সাধারণ সেবক হবার জন্য পূর্ববর্তী নবী-রাসুল (আঃ) গণ নবুয়তের মর্যাদাকে পরিত্যাগ করতে চেয়েছেন; যে দ্বীন ইসলামের খেদমতে সকল তরিকার সকল অলি-আউলিয়া (রঃ) গণ এবং তাঁদের মুরিদেরা আমৃত্যু জিহাদ করেছেন- তাহলে বর্তমান জামানায় কেন মুমিন মুসলমানরা এ দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিকৃতি রুখে দিয়ে পূর্ববর্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসারের ও প্রতিষ্ঠায় নিজস্ব এল্ম, সময়, শ্রম, ধন-সম্পদ ও প্রিয় পরিবার-পরিজন উৎসর্গ করবে না? এ শিক্ষাই কি মহাঅনুগ্রহশীল আল্লাহর আদেশে রাসুলেপাক (সাঃ) তাঁর উম্মতকে দিয়ে যাননি? আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর এশ্্ক ও মহব্বত যার মধ্যে রয়েছে, সে কি দ্বীন ইসলামের খেদমত থেকে দূরে থাকতে পারে! পারে না। এটা সম্ভব নয় সরল-সত্য পথের অন্বেষণকারীদের পক্ষে।
রাসুলেপাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, এমন একটা সময় আসবে যখন জলন্ত অঙ্গার হাতে রাখা যেমন কঠিন, তেমনি ভাবে ইসলামে টিকে থাকা কঠিন হবে (বুখারি, মুসলিম)। বাস্তবিকপক্ষে, আমরা তো এরকম সময়ই পার করছি। প্রেমের নবী রাসুলেপাক (সাঃ) রওজা মুবারকে বসে উম্মি উম্মি করে ক্রন্দন করছেন। আমরা কি দয়াময় আল্লাহর প্রিয় হাবিব সৎ পথপ্রদর্শক নবী করিম (সাঃ)-এর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই না? মহান আল্লাহতায়ালা পাক কুরআনে বলেছেন,
وَمِنهُمُ الَّذينَ يُؤذونَ النَّبِىَّ وَيَقولونَ هُوَ أُذُنٌ قُل أُذُنُ خَيرٍ لَكُم يُؤمِنُ بِاللَّهِ وَيُؤمِنُ لِلمُؤمِنينَ وَرَحمَةٌ لِلَّذينَ ءامَنوا مِنكُم وَالَّذينَ يُؤذونَ رَسولَ اللَّهِ لَهُم عَذابٌ أَليمٌُ
অর্থ: যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (সূরা তওবা, আয়াত-৬১)
হে দয়াময় প্রভু! আপনি এমন ভাবে দয়া করুন যেন সত্য পথের অনুসন্ধানকারীরা ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পারে, সহী সিলসিলার অনুসারী পৃথিবীর শেষ তরিকা নক্শবন্দি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার হায়াতে আউলিয়ার সন্ধান লাভ করে ইসলামের বায়আত গ্রহণপূর্বক নিজের ধন-সম্পদ, শক্তি, সময় ও পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশুদ্ধ অন্তরে খেদমত করে দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে সকল অপপ্রচার ও বিকৃতি রুখে দিয়ে আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর খাঁটি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সবাই আত্মনিয়োগ করতে পারে।
কোন সত্য অন্বেষি মানুষ যখন তওবা পড়ে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করে তখন সমগ্র সৃষ্টির মালিক মহান আল্লাহ তার জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে জান্নাত প্রদানের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ اشتَرىٰ مِنَ المُؤمِنينَ أَنفُسَهُم وَأَموٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقٰتِلونَ فى سَبيلِ اللَّهِ فَيَقتُلونَ وَيُقتَلونَ وَعدًا عَلَيهِ حَقًّا فِى التَّورىٰةِ وَالإِنجيلِ وَالقُرءانِ وَمَن أَوفىٰ بِعَهدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاستَبشِروا بِبَيعِكُمُ الَّذى بايَعتُم بِهِ وَذٰلِكَ هُوَ الفَوزُ العَظيمُُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ মুসলমানদের কাছ থেকে তাঁদের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের মূল্যের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে অতঃপর তারা হত্যা করবে এবং হত্যা হবে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিজের প্রতিজ্ঞা পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে আর কে ভালো? সুতরাং তোমরা আনন্দ উদ্যাপন করো নিজেদের ব্যবসার জন্য, যা তোমরা আল্লাহর সাথে করেছো এবং এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তওবা, আয়াত-১১১)
কিছু সংখ্যক আনসারী তওবা পড়ে ইসলামের বায়আত গ্রহণের সময় আর্জি করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার ইচ্ছানুসারে নিজের জন্য ও আল্লাহর জন্য শর্ত নির্ধারণ করুন। আমরা তা যথাযথভাবে পূরণ করতে থাকবো”। তদুত্তরে রাসুলেপাক (সাঃ) বললেন, “আল্লাহর জন্য তো এ শর্ত যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না। আর আমার জন্য এ শর্ত যে, যে বস্তুটি তোমার নিজেদের জন্য পছন্দ করবে না, তা আমার জন্যও পছন্দ করোনা”। তখন তারা বিনীত ভাবে জানতে চাইলো, “এ শর্তগুলো পূরণ করলে আমরা কি পাবো”? তখন দয়ালনবী মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, “জান্নাত”! আনসাররা এ সময় বললেন, “এটা তো বড় লাভজনক সওদা (ব্যবসা)”; এ আয়াতটি উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়। (রূহুল বয়ান)
বায়আত শব্দের অর্থ বিক্রি। কেউ যখন ইসলামের বায়আত গ্রহণ করে তখন সে নিজের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করে জান্নাত খরিদ করে নিয়ে আসে। অর্থাৎ বায়আত গ্রহণের সময়ই একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যে তার জান ও মাল দ্বারা সে ইসলামের খেদমত করবে। এ জান ও মাল তখন খরচ হতে পারে জিহাদে, হতে পারে মুসলমানদের আর্থিক দৈন্য দূর করতে, হতে পারে ইসলাম প্রচারে, হতে পারে কোন সম্প্রদায়কে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে ইত্যাদি।
মহাক্ষমতাশালী আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার দ্বীন-ইসলাম। এ ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ঠ প্রচার ও প্রসার করেছেন বিশ্বনবী রাসুলেপাক (সাঃ)। এজন্য হুজুরেপাক (সাঃ)-এর সম্মান, মর্যাদা ও মর্তবা আল্লাহর দরবারে আর সবার থেকে বেশী। তাই দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সাধ্য অনুযায়ী জান, মাল ও এল্ম দ্বারা খেদমত করে মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব (সাঃ)-এর মহাসন্তুষ্টি অর্জন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য অর্থাৎ সকল ফরযের বড় ফরয।