আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা খেদমত কি

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা খেদমত মহান আল্লাহর এক অশেষ এবং অবারিত নিয়ামত মুমিন মুসলমানদের জন্য। আল্লাহর কাছে সাততবক আসমান-যমীনের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় তাঁর দ্বীন ইসলাম এবং সেই ইসলামের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সেবক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। রাসুলেপাক (সাঃ) মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর এ দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যয় করেছেন নিজের সারা জীবনের সম্পূর্ণ সময়, তাঁর জ্যোতির্ময় এল্মে শরীয়ত ও মারেফতের জ্ঞান, তাঁর সমস্ত সম্পদ, তাঁর বরকতময় শারীরিক শ্রম (জিহাদ, সফর, ইবাদত ইত্যাদি) এবং মানবিক উৎকর্ষতাগুলো। দয়াল নবী (সাঃ)-এর এ সর্বোচ্চ দান এবং অনুকরণীয় খেদমত ও ত্যাগ-তিতিক্ষা পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কারো সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। তিনি অভাবহীন ও অমুখাপেক্ষী আল্লাহর মহব্বতে দ্বীন ইসলাম প্রচার এবং প্রসারের স্বার্থে নিজের আরাম-আয়েশ, ধন-সম্পদ এবং জীবনের মায়া পদদলিত করেছেন এবং এ শিক্ষাই তিনি তাঁর সাহাবী (রাঃ) গণকে ও ভবিষ্যৎ উম্মতকে দিয়েছেন। রাসুলেপাক (সাঃ)-এর উচ্চ মর্যাদার কারণে পূর্ববর্তী নবী-রাসুল (আঃ) গণও এ পৃথিবীতে নবী-রাসুল হিসেবে না এসে নবী করিম (সাঃ)-এর একজন সাধারণ উম্মত হয়ে আসার জন্য আল্লাহর কাছে আর্জির কথাও আমরা জানি। সুতরাং যে দ্বীন ইসলাম মহিমান্বিত আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ধর্ম; যে দ্বীন ইসলামের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেদমতকারী প্রথম সৃষ্টি নূরনবী হুজুরেপাক (সাঃ); যে দ্বীন ইসলামের জন্য সাহাবী (রাঃ) গণ হাসিমুখে রাসুল (সাঃ)-এর খেয়ালে কালেমা পড়তে পড়তে তাঁদের প্রিয় পরিবার, ধন-সম্পদ ও জীবন কোরবানী করেছেন; যে দ্বীন ইসলামের একজন সাধারণ সেবক হবার জন্য পূর্ববর্তী নবী-রাসুল (আঃ) গণ নবুয়তের মর্যাদাকে পরিত্যাগ করতে চেয়েছেন; যে দ্বীন ইসলামের খেদমতে সকল তরিকার সকল অলি-আউলিয়া (রঃ) গণ এবং তাঁদের মুরিদেরা আমৃত্যু জিহাদ করেছেন- তাহলে বর্তমান জামানায় কেন মুমিন মুসলমানরা এ দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিকৃতি রুখে দিয়ে পূর্ববর্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসারের ও প্রতিষ্ঠায় নিজস্ব এল্ম, সময়, শ্রম, ধন-সম্পদ ও প্রিয় পরিবার-পরিজন উৎসর্গ করবে না? এ শিক্ষাই কি মহাঅনুগ্রহশীল আল্লাহর আদেশে রাসুলেপাক (সাঃ) তাঁর উম্মতকে দিয়ে যাননি? আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর এশ্্ক ও মহব্বত যার মধ্যে রয়েছে, সে কি দ্বীন ইসলামের খেদমত থেকে দূরে থাকতে পারে! পারে না। এটা সম্ভব নয় সরল-সত্য পথের অন্বেষণকারীদের পক্ষে।

রাসুলেপাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, এমন একটা সময় আসবে যখন জলন্ত অঙ্গার হাতে রাখা যেমন কঠিন, তেমনি ভাবে ইসলামে টিকে থাকা কঠিন হবে (বুখারি, মুসলিম)। বাস্তবিকপক্ষে, আমরা তো এরকম সময়ই পার করছি। প্রেমের নবী রাসুলেপাক (সাঃ) রওজা মুবারকে বসে উম্মি উম্মি করে ক্রন্দন করছেন। আমরা কি দয়াময় আল্লাহর প্রিয় হাবিব সৎ পথপ্রদর্শক নবী করিম (সাঃ)-এর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই না? মহান আল্লাহতায়ালা পাক কুরআনে বলেছেন,

وَمِنهُمُ الَّذينَ يُؤذونَ النَّبِىَّ وَيَقولونَ هُوَ أُذُنٌ قُل أُذُنُ خَيرٍ لَكُم يُؤمِنُ بِاللَّهِ وَيُؤمِنُ لِلمُؤمِنينَ وَرَحمَةٌ لِلَّذينَ ءامَنوا مِنكُم وَالَّذينَ يُؤذونَ رَسولَ اللَّهِ لَهُم عَذابٌ أَليمٌُ

অর্থ: যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (সূরা তওবা, আয়াত-৬১)

হে দয়াময় প্রভু! আপনি এমন ভাবে দয়া করুন যেন সত্য পথের অনুসন্ধানকারীরা ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পারে, সহী সিলসিলার অনুসারী পৃথিবীর শেষ তরিকা নক্শবন্দি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার হায়াতে আউলিয়ার সন্ধান লাভ করে ইসলামের বায়আত গ্রহণপূর্বক নিজের ধন-সম্পদ, শক্তি, সময় ও পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশুদ্ধ অন্তরে খেদমত করে দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে সকল অপপ্রচার ও বিকৃতি রুখে দিয়ে আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর খাঁটি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সবাই আত্মনিয়োগ করতে পারে।

কোন সত্য অন্বেষি মানুষ যখন তওবা পড়ে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করে তখন সমগ্র সৃষ্টির মালিক মহান আল্লাহ তার জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে জান্নাত প্রদানের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,

إِنَّ اللَّهَ اشتَرىٰ مِنَ المُؤمِنينَ أَنفُسَهُم وَأَموٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقٰتِلونَ فى سَبيلِ اللَّهِ فَيَقتُلونَ وَيُقتَلونَ وَعدًا عَلَيهِ حَقًّا فِى التَّورىٰةِ وَالإِنجيلِ وَالقُرءانِ وَمَن أَوفىٰ بِعَهدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاستَبشِروا بِبَيعِكُمُ الَّذى بايَعتُم بِهِ وَذٰلِكَ هُوَ الفَوزُ العَظيمُُ

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ মুসলমানদের কাছ থেকে তাঁদের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের মূল্যের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে অতঃপর তারা হত্যা করবে এবং হত্যা হবে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিজের প্রতিজ্ঞা পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে আর কে ভালো? সুতরাং তোমরা আনন্দ উদ্যাপন করো নিজেদের ব্যবসার জন্য, যা তোমরা আল্লাহর সাথে করেছো এবং এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তওবা, আয়াত-১১১)

কিছু সংখ্যক আনসারী তওবা পড়ে ইসলামের বায়আত গ্রহণের সময় আর্জি করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার ইচ্ছানুসারে নিজের জন্য ও আল্লাহর জন্য শর্ত নির্ধারণ করুন। আমরা তা যথাযথভাবে পূরণ করতে থাকবো”। তদুত্তরে রাসুলেপাক (সাঃ) বললেন, “আল্লাহর জন্য তো এ শর্ত যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না। আর আমার জন্য এ শর্ত যে, যে বস্তুটি তোমার নিজেদের জন্য পছন্দ করবে না, তা আমার জন্যও পছন্দ করোনা”। তখন তারা বিনীত ভাবে জানতে চাইলো, “এ শর্তগুলো পূরণ করলে আমরা কি পাবো”? তখন দয়ালনবী মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, “জান্নাত”! আনসাররা এ সময় বললেন, “এটা তো বড় লাভজনক সওদা (ব্যবসা)”; এ আয়াতটি উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়। (রূহুল বয়ান)

বায়আত শব্দের অর্থ বিক্রি। কেউ যখন ইসলামের বায়আত গ্রহণ করে তখন সে নিজের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করে জান্নাত খরিদ করে নিয়ে আসে। অর্থাৎ বায়আত গ্রহণের সময়ই একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যে তার জান ও মাল দ্বারা সে ইসলামের খেদমত করবে। এ জান ও মাল তখন খরচ হতে পারে জিহাদে, হতে পারে মুসলমানদের আর্থিক দৈন্য দূর করতে, হতে পারে ইসলাম প্রচারে, হতে পারে কোন সম্প্রদায়কে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে ইত্যাদি।

মহাক্ষমতাশালী আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার দ্বীন-ইসলাম। এ ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ঠ প্রচার ও প্রসার করেছেন বিশ্বনবী রাসুলেপাক (সাঃ)। এজন্য হুজুরেপাক (সাঃ)-এর সম্মান, মর্যাদা ও মর্তবা আল্লাহর দরবারে আর সবার থেকে বেশী। তাই দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সাধ্য অনুযায়ী জান, মাল ও এল্ম দ্বারা খেদমত করে মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব (সাঃ)-এর মহাসন্তুষ্টি অর্জন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য অর্থাৎ সকল ফরযের বড় ফরয।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহর রাস্তায় খেদমত

পবিত্র কুরআনের অনেক সূরায় অভাবহীন ও অমুখাপেক্ষী আল্লাহ দ্বীন ইসলামের জন্য জান ও মাল দ্বারা খেদমত করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত আয়াতগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

الَّذينَ ءامَنوا وَهاجَروا وَجٰهَدوا فى سَبيلِ اللَّهِ بِأَموٰلِهِم وَأَنفُسِهِم أَعظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ وَأُولٰئِكَ هُمُ الفائِزونَ ُ يُبَشِّرُهُم رَبُّهُم بِرَحمَةٍ مِنهُ وَرِضوٰنٍ وَجَنّٰتٍ لَهُم فيها نَعيمٌ مُقيمٌ ُ خٰلِدينَ فيها أَبَدًا إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجرٌ عَظيمٌ ُ

অর্থ: ২০. আর ঐ সব লোক, যারা ঈমান (বায়আত হয়েছে ইসলাম গ্রহণের) এনেছে, হিজরত করেছে এবং স্বীয় সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে, আল্লাহর কাছে তাঁদের সবচেয়ে বড় মর্যাদা এবং তারাই সফলকাম। ২১. তাঁদের প্রতিপালক তাঁদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন নিজ দয়া ও আপন সন্তুষ্টির এবং ঐ সব জান্নাতের, যেখানে তাঁদের জন্য রয়েছে স্থায়ী সুখ। ২২. সেখানে তাঁরা থাকবে চিরকাল। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছেই তো সবচেয়ে বড় পুরষ্কার। (সূরা তওবা, আয়াত-২০,২১,২২)

পাক কুরআনে মহান আল্লাহ আরো বলেন,

لٰكِنِ الرَّسولُ وَالَّذينَ ءامَنوا مَعَهُ جٰهَدوا بِأَموٰلِهِم وَأَنفُسِهِم وَأُولٰئِكَ لَهُمُ الخَيرٰتُ وَأُولٰئِكَ هُمُ المُفلِحونَ ُ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم جَنّٰتٍ تَجرى مِن تَحتِهَا الأَنهٰرُ خٰلِدينَ فيها ذٰلِكَ الفَوزُ العَظيمُُ

অর্থ: ৮৮. কিন্তু রাসুল এবং যারা তাঁর সঙ্গে ঈমান (বায়আত গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছে) এনেছে, তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ (সংগ্রাম বা যুদ্ধ) করেছে এবং তাঁদের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে আর তারাই সফলকাম। ৮৯. আল্লাহ তাঁদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন জান্নাতসমূহ, যেগুলোর নিচে নহরসমূহ (নদী) প্রবাহমান; যেখানে তারা অবস্থান করবে চিরকাল। এ-ই মহাসাফল্য। (সূরা তওবা, আয়াত-৮৮,৮৯)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,

مَثَلُ الَّذينَ يُنفِقونَ أَموٰلَهُم فى سَبيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَت سَبعَ سَنابِلَ فى كُلِّ سُنبُلَةٍ مِا۟ئَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضٰعِفُ لِمَن يَشاءُ وَاللَّهُ وٰسِعٌ عَليمٌ ُ

অর্থ: যারা আল্লাহর পথে আপন ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজের মতো যা থেকে সাতটি শিষ জন্মায়, প্রতিটি শিষে থাকে একশো দানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬১)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

الَّذينَ يُنفِقونَ أَموٰلَهُم بِالَّيلِ وَالنَّهارِ سِرًّا وَعَلانِيَةً فَلَهُم أَجرُهُم عِندَ رَبِّهِم وَلا خَوفٌ عَلَيهِم وَلا هُم يَحزَنونَ ُ

অর্থ: ওই সব লোক, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ খেদমত করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাঁদের জন্য তাঁদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরষ্কার। তাই তাঁদের না আছে কোন আশঙ্কা এবং তারা কোন দুঃখও পাবেনা। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৪)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا أَنفِقوا مِمّا رَزَقنٰكُم مِن قَبلِ أَن يَأتِىَ يَومٌ لا بَيعٌ فيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفٰعَةٌ وَالكٰفِرونَ هُمُ الظّٰلِمونَ ُ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর পথে আমার প্রদত্ত ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করো ওই দিন আসার পূর্বে, যার মধ্যে না কোন কেনাবেচা থাকবে, না কাফেরদের জন্য বন্ধুত্ব এবং না শাফাআত, আর কাফেররা নিজেরাই অত্যাচারী। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৫৪)

হাদিস শরীফে আল্লাহর রাস্তায় খেদমত

হাদিস শরীফে অসংখ্য স্থানে ইসলামের খেদমতের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বুখারি শরীফে বর্ণিত একটি হাদিসে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা খেদমতকে প্রতিযোগিতার বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন।

নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, প্রতিযোগিতা করে হাসিল করার উপযোগী গুণ মাত্র দুইটি- ১. এক ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা ধনদৌলত দান করেছেন, সে ঐ সম্পদ জমা করে রাখেনা বরং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার কাজে আজীবন লিপ্ত থাকে; ২. এক ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা দ্বীনের এল্ম দান করেছেন, সে ঐ এল্ম দ্বারা জীবনের সমস্ত সমস্যাবলীর সমাধান করে এবং মানুষকে বিনা পারিশ্রমিকে উক্ত শিক্ষা দান করতে থাকে। (বুখারি, হাদিস-৩৭)

হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) কর্তৃক বুখারি শরীফে বর্ণিত একটি হাদিসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খেদমত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিস শরীফে এসেছে, একদা আমি (আবুজর গিফারী রাঃ) নবী করিম (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি দূর হতে উহুদ পাহাড় দেখতে পেয়ে বললেন, এই পাহাড়টি স্বর্ণে পরিণত করে দিলেও আমি একটি স্বর্ণমুদ্রাও তিন দিনের বেশী আমার কাছে রাখবো না; কেবল ঋণ থাকলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যতীত। যারা দুনিয়াতে অধিক সম্পদের অধিকারী, তারাই অধিক অভাবগ্রস্ত। তবে হ্যাঁ সে ছাড়া, যে আল্লাহর রাস্তায় অধিকতর ব্যয় করে। কিন্তু এদের সংখ্যা অতি নগন্য। (বুখারি, হাদিস-১১৬১)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফের হাদিসে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহও ঐ বান্দার জন্য ব্যয় করেন বলে উল্লেখ আছে।

রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! ব্যয় কর আল্লাহর রাস্তায়। আমিও তোমার জন্য ব্যয় করবো। (বুখারি, হাদিস-১২০১)

হযরত আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফের হাদিসে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য খেদমতকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নবী করিম (সাঃ) বলেন, আমি কুরাইশদের অন্তরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তাদের দান করি। কেননা, তারা সবে মাত্র জাহেলিয়াত পরিত্যাগ করেছে। (বুখারি, হাদিস-১১৮৭)

একই বিষয়ে হযরত আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফের আর একটি হাদিসে আনসারগণ অপেক্ষা কুরাইশদের অধিক দান প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে।

নবী করিম (সাঃ) আনসারগণের কতিপয় লোককে একত্রিত করে তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, কুরাইশগণ আপদ-বিপদ এবং অন্ধকার হতে এই মাত্র ফিরে এসেছে। আমি তাদেরকে অধিক দান করে মনোসন্তুষ্টি করতে চাচ্ছি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য সকলে জাগতিক সামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরলো আর তোমরা আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে বাড়ি ফিরলে? উত্তরে সবাই বললেন, নিশ্চয়ই আমরা সন্তুষ্ট আছি। (বুখারি, হাদিস-১১৯০)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে সামান্য খেদমতও সাদরে গ্রহণীয় বিষয়ে একটি হাদিসের উল্লেখ আছে।

রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, আমাকে যদি সামান্য ক্ষুর ও হাতের সামান্য গোশতের খেদমত দেবার জন্যও ডাকা হয় তবুও আমি যাব এবং যদি ক্ষুর বা সামান্য গোশত আমাকে উপহার পাঠানো হয় তাও আমি গ্রহণ করবো। (বুখারি, হাদিস-১১৭৮)

হযরত আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে এসেছে, নবী করিম (সাঃ) কে হাদিয়া দেওয়া হলে তিনি তা গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদান প্রদান করতেন। (বুখারি, হাদিস-১১৭৯)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফের একটি হাদিসে মহিলাদের আল্লাহর রাস্তায় অধিক ব্যয়ের ব্যাপারে উল্লেখ আছে।

এক ব্যক্তি আমাকে (হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ) জিজ্ঞাসা করলো- নবী করিম (সাঃ)-এর সাথে কোন ঈদের জামাতে আপনি উপস্থিত ছিলেন কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। অবশ্য হযরত (সাঃ)-এর বিশেষ নৈকট্য লাভ না করলে আমার ভাগ্যে সেটা জুটত না। কারণ আমি ছিলাম বয়ঃকনিষ্ঠ। একদা ঈদের দিন আমি রাসুলেপাক (সাঃ)-এর সাথেই বের হলাম। যে স্থানে নিশান উড্ডীয়মান ছিলো নবী করিম (সাঃ) ঐ স্থানে আসলেন এবং নামায আদায় করলেন। তারপর খুৎবা প্রদান করলেন। তাঁর ধারণা হলো পেছনে উপবিষ্ট মহিলাগণ হয়ত তাঁর ভাষণ শুনতে পায়নি। এই ভেবে তিনি বেলাল (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে তাদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে নসিহত করলেন ও আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার আহবান জানালেন। নবী করিম (সাঃ) মহিলাগণকে খেদমতের প্রতি পুনঃ পুনঃ উৎসাহ দিলেন। মহিলারা তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে তাদের অলংকারাদি খুলে দিতে লাগলেন আর বেলাল (রাঃ) ঐগুলিকে সংগ্রহ করতে লাগলেন। (বুখারি, হাদিস-১১৭৭)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে একটি হাদিসে স্বামীর উপার্জন থেকে অনুমতি ব্যতীত মহিলাদের ব্যয়-খেদমতে সমান সওয়াবের ব্যাপারে উল্লেখ আছে।

নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, যদি কোন মহিলা তার স্বামীর উপার্জন হতে অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যয় করে তবে সে ঐ খেদমতে অর্ধেক (স্বামীর সমান অর্থে) সওয়াব পাবে। (বুখারি, হাদিস-১১৯৭)

কোন অবস্থায় খেদমত উত্তম

বুখারি শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত কোন ধরনের খেদমত সর্বাধিক পূণ্যের বিষয়ে একটি হাদিস আছে।

একদিন এক ব্যক্তি রাসুলেপাক (সাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলো, কোন ধরনের খেদমত সর্বাধিক পূণ্যের? তিনি বললেন, সুস্থাবস্থায়, অর্থের প্রতি লোভ থাকা কালে আর দারিদ্রের আশঙ্কা থাকা কালে এবং ধনী হবার আকাঙ্খা পোষণকালে যে খেদমত করবে। যখন তোমার শেষ নিঃশ্বাস কণ্ঠনালী পর্যন্ত এসে গেছে তখন তুমি বলতে থাকো- অমুককে এত দিলাম, অমুককে অত দিলাম, অথচ সে অবস্থায় ধন-সম্পত্তিতো উত্তরাধিকারীদের হয়ে গেছে। (বুখারি, হাদিস-১১৪৩)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে আর একটি হাদিসে অভাব মুক্ত অবস্থায় খেদমতকে সর্বোত্তম বলা হয়েছে।

নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, অভাব মুক্ত (প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ হতে) অবস্থায় যে খেদমত করা হয়, তাই সর্বোত্তম খেদমত আর স্বীয় পোষ্যদেরকে দিয়ে দান-খেদমত শুরু করো। (বুখারি, হাদিস-১১৪৪)

হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বুখারি শরীফে দিন এনে দিন খায় এমন গরীব সাহাবী (রাঃ) গণের খেদমতের আগ্রহের সম্পর্কিত একটি হাদিস উল্লেখ আছে।

রাসুলেপাক (সাঃ) যখন আমাদের খেদমত করতে আদেশ করতেন তখন আমাদের কেউ কেউ বাজারে চলে যেত এবং মুট বহন করে একমুদ (প্রায় একশের) মজুরী লাভ করতো এবং তা থেকে খেদমত করতো। আর আজ তাদের কেউ কেউ লাখপতি। (বুখারি, হাদিস-১১৪১)

খেদমতের ক্ষেত্রে সাবধানতা

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ খেদমতের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়ে ইরশাদ করেছেন,

يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا لا تُبطِلوا صَدَقٰتِكُم بِالمَنِّ وَالأَذىٰ كَالَّذى يُنفِقُ مالَهُ رِئاءَ النّاسِ وَلا يُؤمِنُ بِاللَّهِ وَاليَومِ الءاخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفوانٍ عَلَيهِ تُرابٌ فَأَصابَهُ وابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلدًا لا يَقدِرونَ عَلىٰ شَيءٍ مِمّا كَسَبوا وَاللَّهُ لا يَهدِى القَومَ الكٰفِرينَ ُ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপন খেদমতকে নিষ্ফল করে দিওনা প্রচার করে ও খোঁটা দিয়ে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আপন ধন-সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসে বিশ্বাস করেনা। সুতরাং তার উপমা তেমনই, যেমন একটা মসৃন পাথর, যার উপর মাটি রয়েছে, এখন সেটার উপর প্রবল বৃষ্টি হলো, যা সেটাকে নিরেট পাথর করে ছাড়লো। যা তারা উপার্জন করেছে, তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবেনা। আল্লাহ তো অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে (কাফেরদের) সৎপথে পরিচালিত করেননা। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬৪)

কেন কেউ রিযিকপ্রাপ্ত হয় এবং কিভাবে খরচ করবে

হযরত আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলেপাক (সাঃ)-এর জামানায় দুই ভাই ছিলেন। তাদের একজন রাসুলেপাক (সাঃ)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতেন এবং অন্যজন রুজি-রোজগার করতেন। একবার শেষোক্ত ভাই রাসুল (সাঃ)-এর কাছে অন্য ভাই সম্পর্কে অভিযোগ করলেন যে, তিনি কোন কাজকর্ম করেন না; বরং জীবিকার ব্যাপারে তার ওপরই নির্ভরশীল। তখন রাসুলেপাক (সাঃ) বলেন, এমনও হতে পারে, তোমার সেই ভাই এর ওসিলায় তোমাকে রিযিক প্রদান করা হচ্ছে। (তিরমিজি)

অনেক মুসলমান ভাই ও বোন আছে যারা নিজের সংসারের দিকে তাকানোর সময় পায়না বরং তারা ইসলামের খেদমতে সদাসর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকে। আর এই সব দরিদ্র জাকের ভাই-বোনদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য মহান আল্লাহ কিছু মুসলমান জাকেরদেরকে সাহায্য ও রিযিক দিয়ে থাকেন যাতে সাহায্যপ্রাপ্ত ও রিযিকপ্রাপ্তরা সেখান থেকে ঐ সব দরিদ্রদের সহায়তা করতে পারে।

হযরত মুসআব ইবনে সায়াদ (রাঃ) কর্তৃক বুখারি শরীফে এ সম্পর্কিত একটি হাদিস বর্ণিত আছে, আমার পিতা মনে করতেন যে অন্যান্যদের তুলনায় তার মর্যাদা অনেক বেশী। অতঃপর রাসুলেপাক (সাঃ) বললেন, তোমাদের দুর্বল ও অসহায়দের কারণেই তোমরা সাহায্য ও রিযিকপ্রাপ্ত হয়ে থাকো। (বুখারি, হাদিস-১১৭২)

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিযিকদাতা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

لِلفُقَراءِ الَّذينَ أُحصِروا فى سَبيلِ اللَّهِ لا يَستَطيعونَ ضَربًا فِى الأَرضِ يَحسَبُهُمُ الجاهِلُ أَغنِياءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعرِفُهُم بِسيمٰهُم لا يَسـَٔلونَ النّاسَ إِلحافًا وَما تُنفِقوا مِن خَيرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَليمٌ ُ

অর্থ: (এই খেদমত) অভাবীদের প্রাপ্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যস্ত যে জীবিকার সন্ধানে ঘোরাফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায়না বলে অবিবেচক ব্যক্তিরা ভাবে তাঁদের অভাব নেই। তুমি তাঁদের বাহ্যিক লক্ষণ দেখে চিনে নেবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড়বান্দার মতো সাহায্যের জন্য কাকুতি-মিনতি করেনা। আর তোমরা যা খেদমত করো, আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৩)

আল্লাহকে উত্তম বস্তু খেদমতের বিধান

মহান আল্লাহ উত্তম বস্তু তাঁকে খেদমত করতে আদেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে অভাবহীন ও সূক্ষদর্শী আল্লাহ বলেন,

يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا أَنفِقوا مِن طَيِّبٰتِ ما كَسَبتُم وَمِمّا أَخرَجنا لَكُم مِنَ الأَرضِ وَلا تَيَمَّمُوا الخَبيثَ مِنهُ تُنفِقونَ وَلَستُم بِـٔاخِذيهِ إِلّا أَن تُغمِضوا فيهِ وَاعلَموا أَنَّ اللَّهَ غَنِىٌّ حَميدٌُ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করো এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে দিই, তার থেকে ভালো যা, তা খেদমত করো। মন্দ জিনিস খেদমত করার ইচ্ছা করোনা, কারণ তোমরা তো তা নাও না, যদি না তোমরা চোখ বুজে থাক। আর জেনে রাখ, আল্লাহর অভাব নেই, প্রশংসা তারই। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬৭)

এছাড়া সূরা তওবার ১১১ নং আয়াত নাযিল হওয়ার যে শানেনুযুল (সূরা নাযিল হবার প্রেক্ষাপট), সেখানে রাসুলেপাক (সাঃ) আরব আনসারদের দুটি শর্তের একটি শর্ত এভাবে পালন করতে বলেছিলেন যে, “যে বস্তুটি তোমরা নিজেদের জন্য পছন্দ করবে না, তা আমার জন্যও পছন্দ করবে না”। (রূহুল বয়ান)

আল্লাহর রাস্তায় খেদমতের পুরষ্কার

খেদমত করতে নিয়ত থাকতে হবে রিযিকদাতা আল্লাহ ও সর্বোচ্চ খেদমতকারী রাসুল (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি। তাহলে মহান আল্লাহ ঐ ব্যয় বা খেদমতকে কবুল করবেন দয়াল নবী (সাঃ) এবং অলি-আল্লাহ (রঃ)-এর সুপারিশে আর এক্ষেত্রে খেদমতকারীর জন্য রয়েছে মহাপুরষ্কার।

পবিত্র কুরআনে অভাবমোচনকারী আল্লাহ ইসলামের রাস্তায় খেদমতকারীদের পুরষ্কার প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন,

الَّذينَ يُنفِقونَ أَموٰلَهُم فى سَبيلِ اللَّهِ ثُمَّ لا يُتبِعونَ ما أَنفَقوا مَنًّا وَلا أَذًى لَهُم أَجرُهُم عِندَ رَبِّهِم وَلا خَوفٌ عَلَيهِم وَلا هُم يَحزَنونَُ

অর্থ: ওই সব লোক, যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর না খোঁটা দেয়, না কষ্ট দেয়, তাঁদের প্রতিদান রয়েছে তাঁদের প্রতিপালকের কাছে। তাঁদের কোন ভয় নেই ও তারা দুঃখও পাবেনা। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬২)

এ ব্যাপারে পাক কালামে মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ আরো বলেন,

وَمَثَلُ الَّذينَ يُنفِقونَ أَموٰلَهُمُ ابتِغاءَ مَرضاتِ اللَّهِ وَتَثبيتًا مِن أَنفُسِهِم كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبوَةٍ أَصابَها وابِلٌ فَـٔاتَت أُكُلَها ضِعفَينِ فَإِن لَم يُصِبها وابِلٌ فَطَلٌّ وَاللَّهُ بِما تَعمَلونَ بَصيرٌُ

অর্থ: অপরদিকে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও নিজের অন্তরকে দৃঢ় করার জন্য তাঁদের ধনসম্পদ খেদমত করে, তাঁদের তুলনা উঁচু জায়গায় একটা বাগান যেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয় ও তার ফলে ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। আর মুষলধারে বৃষ্টি না হলে শিশিরই সেখানে যথেষ্ট। তোমরা যা কর আল্লাহ তো তা ভালো করেই দেখেন। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬৫)

সর্বশক্তিমান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো বলেন,

لَيسَ عَلَيكَ هُدىٰهُم وَلٰكِنَّ اللَّهَ يَهدى مَن يَشاءُ وَما تُنفِقوا مِن خَيرٍ فَلِأَنفُسِكُم وَما تُنفِقونَ إِلَّا ابتِغاءَ وَجهِ اللَّهِ وَما تُنفِقوا مِن خَيرٍ يُوَفَّ إِلَيكُم وَأَنتُم لا تُظلَمونَُ

অর্থ: তাদেরকে সৎপথ প্রদান করার দায়িত্ব আপনার জন্য অপরিহার্য নয় (হে হাবিব!)। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। আর তোমরা যা কিছু খেদমত কর, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তা করো। আর যে সম্পদ তোমরা খেদমত করবে তা তোমাদেরকে পুরো করে দেয়া হবে। তোমাদের ওপর অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭২)

সর্বদর্শী আল্লাহ খেদমতকে বর্ধিতকরণের ব্যাপারে ইরশাদ করেন,

يَمحَقُ اللَّهُ الرِّبوٰا۟ وَيُربِى الصَّدَقٰتِ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ كُلَّ كَفّارٍ أَثيمٍُ

অর্থ: আল্লাহ ধ্বংস করেন সুদকে এবং বর্ধিত করেন খেদমতকে। আর আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নয় কোন অকৃতজ্ঞ, মহাপাপী। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৬)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ খেদমতকারী মুসলমান সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

فَأَمّا مَن أَعطىٰ وَاتَّقىٰ ُ وَصَدَّقَ بِالحُسنىٰ ُ فَسَنُيَسِّرُهُ لِليُسرىُُٰ

অর্থ: ৫. সুতরাং ওই ব্যক্তি, যে খেদমত করেছে এবং পরহেযগারী অবলম্বন করেছে, ৬. এবং সবচেয়ে উত্তমকে সত্য মেনে গ্রহণ করেছে, ৭. অতি সত্বর আমি তাঁর জন্য সুখকর পরিণামের পথ সহজ করে দেব। (সূরা আল-লাইল, আয়াত-৫,৬,৭)

সর্বত্র বিরাজমান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

إِن تُبدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمّا هِىَ وَإِن تُخفوها وَتُؤتوهَا الفُقَراءَ فَهُوَ خَيرٌ لَكُم وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِن سَيِّـٔاتِكُم وَاللَّهُ بِما تَعمَلونَ خَبيرٌُ

অর্থ: তোমরা যদি প্রকাশ্যে খেদমত কর, তবে তা ভালো। আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও ভালো। আর এর জন্য তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭১)

দয়াময় আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ করেন,

وَمِنَ الأَعرابِ مَن يُؤمِنُ بِاللَّهِ وَاليَومِ الءاخِرِ وَيَتَّخِذُ ما يُنفِقُ قُرُبٰتٍ عِندَ اللَّهِ وَصَلَوٰتِ الرَّسولِ أَلا إِنَّها قُربَةٌ لَهُم سَيُدخِلُهُمُ اللَّهُ فى رَحمَتِهِ إِنَّ اللَّهَ غَفورٌ رَحيمٌُ

অর্থ: কিছু সংখ্যক গ্রাম্য লোক (মরুবাসী আরবদের কেউ কেউ) আল্লাহ ও কেয়ামতের উপর ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তা আল্লাহর নৈকট্য ও রাসুলের আশীর্বাদ লাভের উপায় মনে করে। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তা তাঁদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। আল্লাহ অতি সত্বর তাঁদেরকে নিজ রহমতের মধ্যে আশ্রয় দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা তওবা, আয়াত-৯৯)

মহাঅনুগ্রহশীল আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ করেন,

وَالَّذينَ يُؤتونَ ما ءاتَوا وَقُلوبُهُم وَجِلَةٌ أَنَّهُم إِلىٰ رَبِّهِم رٰجِعونَ ُ أُولٰئِكَ يُسٰرِعونَ فِى الخَيرٰتِ وَهُم لَها سٰبِقونَ ُ

অর্থ: ৬০. এবং যারা তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাবে- এ বিশ্বাসে তাঁদের যা খেদমত করার কম্পিত হৃদয়ে তা ব্যয় করে, ৬১. এসব লোক কল্যাণকর কার্যাদি দ্রæত সম্পাদন করে এবং এরাই সর্বপ্রথম সেগুলোর কাছে পৌঁছে যাবে। (সূরা আল-মুমিন, আয়াত-৬০,৬১)

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খেদমত করলে মহাঅনুগ্রহশীল আল্লাহতায়ালা তার কি প্রতিদান দেবেন নি¤েœ এ সংক্রান্ত কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলোঃ

হযরত সায়াদ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলেপাক (সাঃ) বলেন, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তুমি যা কিছু খরচ করবে তার সওয়াব নিশ্চয়ই পাবে; এমন কি স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়াতেও সওয়াব হবে। (বুখারি, হাদিস-১১৩২)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলেপাক (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বৈধ উপার্জন হতে একটি খেজুর পরিমাণ খেদমত করে আর আল্লাহতায়ালা পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেন না, আল্লাহ ঐ খেদমত ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা খেদমতকারীর জন্য পরিপোষণ করতে থাকেন যেভাবে তোমরা অশ্বশাবক পরিপোষণ করে থাকো। শেষ পর্যন্ত ঐ খেদমত পাহাড় সদৃৃশ হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস-১১৩৪)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, প্রতিদিন প্রত্যুষে বান্দাদের ঘুম হতে উঠার সময় দুইজন ফেরেশতা আসমান হতে নেমে আসে। তাদের একজন বলতে থাকে, হে আল্লাহ! খেদমতকারীদের পুরষ্কৃত কর এবং অপরজন বলতে থাকে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস কর। (বুখারি, হাদিস-১১৫৩)

হযরত আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ)-এর সহধর্মীনিদের কেউ কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের মধ্যে কে সর্বাগ্রে আপনার সাথে মরণের পরে মিলিত হবে? রাসুলেপাক (সাঃ) বললেন, যার হাত সর্বাপেক্ষা লম্বা। তখন একটি কাঠি দিয়ে মেপে দেখা গেল সওদা (রাঃ)-এর হাত সবচেয়ে লম্বা। পরে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, হাত লম্বা অর্থ দানশীলতা। জয়নব বিনতে খোজায়মা (রাঃ) আমাদের মধ্যে সবার আগে রাসুল (সাঃ)-এর সাথে মিলিত হন এবং তিনি দান করতে ভালবাসতেন। (বুখারি, হাদিস-১১৪৫)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত রাসুলেপাক (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক জোড়া খরচ করবে তাকে জান্নাতের সবগুলি দরজা হতে ডেকে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটিই উত্তম। যে নামাযী তাকে নামাযের দরজা হতে ডাকা হবে, যে মোজাহিদ তাকে জিহাদের দরজা হতে ডাকা হবে, যে রোযদার তাকে রায়হান নামক দরজা হতে ডাকা হবে, আর যে সদকাকারী তাকে সদকার দরজা হতে ডাকা হবে। এতদশ্রবণে আবু বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পিতামাতা উভয়েই আপনার জন্য কোরবান হোক। যাকে জান্নাতের ঐ সবগুলো দরজা হতে ডাকা হবে তাঁর জন্য ক্ষতির কোন কারণ নেই। কিন্তু প্রকৃতই কি কাউকেও সবগুলি দরজা হতে ডাকা হবে? রাসুল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ হবে। আর আমি আশা করি তুমি তাঁদের একজন হবে। (বুখারি, হাদিস-২১০৫)

হযরত উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই দান-সদকা কবরের আজাব বন্ধ করে দেয় আর কেয়ামতের দিন বান্দাকে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা করে দেয়। (তাবারানি, বায়হাকি)

খেদমত থেকে বিরত রাখতে শয়তান কি করে

আল্লাহর রাস্তায় খেদমত এর মধ্যে শুধু ধনসম্পদই অন্তর্ভূক্ত নয় বরং এল্ম, সন্তানাদি এবং সময়ও অন্তর্ভূক্ত। মুসলমানদের এই খেদমত থেকে দূরে রাখতে শয়তান কৌশল করে মনের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেয়।

পবিত্র কুরআনে বিশ্বপ্রভু মহান আল্লাহ বলেছেন,

الشَّيطٰنُ يَعِدُكُمُ الفَقرَ وَيَأمُرُكُم بِالفَحشاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَغفِرَةً مِنهُ وَفَضلًا وَاللَّهُ وٰسِعٌ عَليمٌ ُ

অর্থ: শয়তান তোমাদেরকে ভয় দেখায় দারিদ্র্যের আর উষ্কানি দেয় অশ্লীলতার, অপর দিকে আল্লাহ খেদমত করার বিনিময়ে তোমাদেরকে প্রতিশ্রæতি দেন ক্ষমা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬৮)

আল্লাহর রাস্তায় খেদমতে আগ্রহী ও বিমুখদের চিহ্ন বা আচরণ

সূক্ষদর্শী আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

لا يَستَـٔذِنُكَ الَّذينَ يُؤمِنونَ بِاللَّهِ وَاليَومِ الءاخِرِ أَن يُجٰهِدوا بِأَموٰلِهِم وَأَنفُسِهِم وَاللَّهُ عَليمٌ بِالمُتَّقينَُ

إِنَّما يَستَـٔذِنُكَ الَّذينَ لا يُؤمِنونَ بِاللَّهِ وَاليَومِ الءاخِرِ وَارتابَت قُلوبُهُم فَهُم فى رَيبِهِم يَتَرَدَّدونَُ

অর্থ: ৪৪. ওই সব লোক, যারা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে, তারা আপনার নিকট নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা সংগ্রাম (জিহাদ) থেকে অব্যহতি পাবার জন্য ছুটি প্রার্থনা করবে না; এবং আল্লাহ খুব ভালোভাবে জানেন পরহেযগারদেরকে। ৪৫. আপনার নিকট এ ছুটি প্রার্থনা করছে তারাই, যারা আল্লাহর ও কেয়ামতের উপর ঈমান রাখে না এবং যাদের অন্তর সংশয়ে পড়েছে। সুতরাং তারা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। (সূরা তওবা, আয়াত-৪৪,৪৫)

খোদাভীরুরাই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে

রিযিক প্রশস্তকারী আল্লাহ ইরশাদ করেন,

ذٰلِكَ الكِتٰبُ لا رَيبَ فيهِ هُدًى لِلمُتَّقينَ ُ الَّذينَ يُؤمِنونَ بِالغَيبِ وَيُقيمونَ الصَّلوٰةَ وَمِمّا رَزَقنٰهُم يُنفِقونَُ

অর্থ: ২. এ সেই উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন কিতাব (কুরআন), এতে কোন সন্দেহ নেই। এতে হেদায়েত রয়েছে খোদাভীরুদের জন্য; ৩. তারাই, যারা না দেখে ঈমান আনে, সালাত কায়েম রাখে এবং আমার প্রদত্ত জীবিকা থেকে আমার পথে ব্যয় করে। (সূরা বাকারা, আয়াত-২,৩)¬

মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন,

وَالَّذينَ استَجابوا لِرَبِّهِم وَأَقامُوا الصَّلوٰةَ وَأَمرُهُم شورىٰ بَينَهُم وَمِمّا رَزَقنٰهُم يُنفِقونَُ

অর্থ: এবং ওই সব লোক যারা আপন রবের নির্দেশ মেনে নিয়েছে, সালাত কায়েম রেখেছে এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করে এবং আমার প্রদত্ত সম্পদ থেকে কিছু আমার পথে ব্যয় করে। (সূরা আশ-শুরা, আয়াত-৩৮)

আল্লাহর রাস্তায় খেদমত না করার পরিণতি

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় বা খেদমত না করলে তার পরিণতির কথা পবিত্র কুরআন এবং হাদিস শরীফে এসেছে। নি¤েœ কিছু উল্লেখ করা হলোঃ

সতর্ককারী আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

قُل إِن كانَ ءاباؤُكُم وَأَبناؤُكُم وَإِخوٰنُكُم وَأَزوٰجُكُم وَعَشيرَتُكُم وَأَموٰلٌ اقتَرَفتُموها وَتِجٰرَةٌ تَخشَونَ كَسادَها وَمَسٰكِنُ تَرضَونَها أَحَبَّ إِلَيكُم مِنَ اللَّهِ وَرَسولِهِ وَجِهادٍ فى سَبيلِهِ فَتَرَبَّصوا حَتّىٰ يَأتِىَ اللَّهُ بِأَمرِهِ وَاللَّهُ لا يَهدِى القَومَ الفٰسِقينَُ

অর্থ: আপনি বলুন, “যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্মী, তোমাদের পরিজন (স্বগোষ্ঠী), তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ওই ব্যবসা-বাণিজ্য, যার ক্ষতি হবার আশঙ্কা তোমরা করো, এবং তোমাদের প্রিয় বাসস্থান যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তবে আল্লাহর আদেশ পাঠানো পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লাহ তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে (ফাসিক) সৎ পথ প্রদর্শন করেন না”। (সূরা তওবা, আয়াত-২৪)

হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ করেন,

يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِنَّ كَثيرًا مِنَ الأَحبارِ وَالرُّهبانِ لَيَأكُلونَ أَموٰلَ النّاسِ بِالبٰطِلِ وَيَصُدّونَ عَن سَبيلِ اللَّهِ وَالَّذينَ يَكنِزونَ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ وَلا يُنفِقونَها فى سَبيلِ اللَّهِ فَبَشِّرهُم بِعَذابٍ أَليمٍ ُ يَومَ يُحمىٰ عَلَيها فى نارِ جَهَنَّمَ فَتُكوىٰ بِها جِباهُهُم وَجُنوبُهُم وَظُهورُهُم هٰذا ما كَنَزتُم لِأَنفُسِكُم فَذوقوا ما كُنتُم تَكنِزونَُ

অর্থ: ৩৪. হে ঈমানদারগণ! পাদ্রী ও সন্নাসীদের (সংসার বিরাগী) মধ্যে অনেকে মানুষের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত করে। যারা সঞ্চিত করে স্বর্ণ ও রৌপ্য এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা; তাদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন বেদনাদায়ক শাস্তির; ৩৫. যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে ও তা দিয়ে তাদের কপালে, পাশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে; (সেদিন বলা হবে) “এই তো তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলে। তাই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করতে তার স্বাদ নাও”। (সূরা তওবা, আয়াত-৩৪,৩৫)

ন্যায় বিচারক আল্লাহ পাক কালামে আরো বলেন,

وَمِنَ الأَعرابِ مَن يَتَّخِذُ ما يُنفِقُ مَغرَمًا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوائِرَ عَلَيهِم دائِرَةُ السَّوءِ وَاللَّهُ سَميعٌ عَليمٌُ

অর্থ: এবং কিছু সংখ্যক মরুবাসী হচ্ছে তারাই, যারা যা কিছু আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাকে অর্থদন্ড বলে মনে করে আর তোমাদের উপর ভাগ্য বিপর্যয় আসার প্রতীক্ষায় থাকে; তাদের উপরই রয়েছে মন্দ ভাগ্যচক্র এবং আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। (সূরা তওবা, আয়াত-৯৮)

অটল ফয়সালার অধিকারী আল্লাহ পাক কালামে আরো ইরশাদ করেন,

وَأَمّا مَن بَخِلَ وَاستَغنىٰ ُ وَكَذَّبَ بِالحُسنىٰ ُ فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسرىٰ ُ وَما يُغنى عَنهُ مالُهُ إِذا تَرَدّىُُ

অর্থ: ৮. আর কেউ ব্যয়কুন্ঠ হলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে ৯. ও যা ভালো তা বর্জন করলে, ১০. তার জন্য কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দেব ১১. এবং যখন তার পতন ঘটবে তখন ধনসম্পদ তার কোন কাজে আসবে না। (সূরা আল-লাইল, আয়াত-৮,৯,১০,১১)

সঠিক প্রতিশোধ গ্রহণকারী আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন,

حَتّىٰ إِذا أَخَذنا مُترَفيهِم بِالعَذابِ إِذا هُم يَجـَٔرونَ ُ لا تَجـَٔرُوا اليَومَ إِنَّكُم مِنّا لا تُنصَرونَُ

অর্থ: ৬৪. শেষ পর্যন্ত, যখন আমি ওদের মধ্যে ঐশ্বর্যশালী লোকদেরকে শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করি, তখনই তারা ফরিয়াদ করতে থাকে। ৬৫. (তাদেরকে বলা হবে) “আজ ফরিয়াদ করো না! আমার পক্ষ থেকে তোমাদের সাহায্য করা হবে না”। (সূরা আল-মুমিন, আয়াত-৬৪,৬৫)

সর্তককারী আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

الَّذى جَمَعَ مالًا وَعَدَّدَهُ ُ يَحسَبُ أَنَّ مالَهُ أَخلَدَهُ ُ كَلّا لَيُنبَذَنَّ فِى الحُطَمَةِ ُ وَما أَدرىٰكَ مَا الحُطَمَة ُ نارُ اللَّهِ الموقَدَةُ ُ الَّتى تَطَّلِعُ عَلَى الأَفـِٔدَةِ ُ

অর্থ: ২. যে অর্থ জমায় এবং বার বার গোনে, ৩. সে কি এ কথা মনে করে যে, তার সম্পদ তাকে পৃথিবীতে অমর করে রাখবে? ৪. কখনও না। তাকে তো নিক্ষেপ করা হবে হুতামায় (পদদলিতকারীর মধ্যে) ৫. তুমি কি জানো, হুতামা কি? ৬. এ আল্লাহর আগুন যা প্রজ্বলিত হচ্ছে ৭. এ আগুন অন্তরগুলোকে (দুষ্ট মন ও ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী যারা কুরআন শোনে, খোদাকে মানে কিন্তু ঈমান পায়না কুরআনের মহান ধারককে না মানার কারণে) গ্রাস করবে। (সূরা আল-হুমাযাহ, আয়াত-২,৩,৪,৫,৬,৭)

হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে ধনশালীদের অধিক বিপদগ্রস্থতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। একদা বিশ্বনবী (সাঃ) কাবা গৃহের ছায়ায় বসে ছিলেন। আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে শুনতে পেলাম, তিনি বলছেন, কাবার মালিকের কসম! তারাই অধিক বিপদগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমার কোন ক্রটি হয়েছে ভেবে অত্যন্ত শঙ্কিত চিত্তে তাঁর নিকট বসে আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কাদের কথা বলছেন? তিনি বললেন, যাদের ধনদৌলত বেশি। অবশ্য তাদের মধ্যে যারা ধনসম্পদ খরচ করে সৎ কার্যসমূহে, ডানে, বামে ও সম্মুখে তাদের কথা আলাদা।

তিনি আরও বললেন, কসম ঐ আল্লাহর যার হাতে আমার প্রাণ এবং যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই; যার উট, গরু বা বকরীর পাল আছে এবং সে তার উপর হতে আল্লাহর হক আদায় করেনা। কেয়ামতের দিন সেই উট, গরু বা ছাগলগুলি অধিকতর মোটা তাজা হয়ে সারিবদ্ধ ভাবে ঐ ব্যক্তিকে পদদলিত করে পিষ্ট করতে এবং শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সারির শেষ মাথা যেতে না যেতেই তাদের প্রথম মাথা ঘুরে পুনরায় এসে যাবে সমস্ত লোকদের হিসাব-নিকাশ ও বিচারপর্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস-১১০১)

হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে ধনসম্পদ পুঞ্জীভূত করার আযাব সম্পর্কে উল্লেখ আছে। একদা আমি কুরাইশদের একটি দলের মধ্যে বসাকালে হঠাৎ সেখানে একজন লোকের আগমন ঘটলো- যার চুলে, পোশাক-পরিচ্ছদে এবং মুখমন্ডলে রুক্ষতার ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। লোকটি তাদের নিকট এসে সালাম করে বললো, সম্পদ পুঞ্জীভূতকারীদের এই বলে সংবাদ দাও যে একটি পাথরকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে বুকের উপর রাখা হবে যা হাড়গোড় ভেদ করে বের হয়ে যাবে। তারপর সেটাকে কাঁধের উপর রাখা হবে যা তার বক্ষস্থল ভেদ করে বের হয়ে যাবে এবং কাঁপতে থাকবে।

এই কথা বলে লোকটি পেছনদিকে সরে গিয়ে একটি খুঁটির নিকট বসে পড়লে আমিও তার পিছু পিছু এসে তাঁর নিকট বসে পড়লাম। তিনি কে তা আমি জানতাম না। আমি তাকে বললাম, আপনি যা বললেন তাতে তারা সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মনে হলো না। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝেনা। অথচ আমার হাবিব রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, হে আবুজর! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখতে পাচ্ছ? আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কিছু অংশ তখনও বাকি আছে। আমি ভাবলাম তিনি আমাকে কোন দরকারে পাঠাবেন। তাই বললাম, দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, আমি এটা মোটেই পছন্দ করিনা যে উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আমার হোক আর আমি তা খরচ করি নিজের জন্য। আমার শুধু তিনটি স্বর্ণমুদ্রা হলেও যথেষ্ট।

অথচ এরা তা বুঝেনা। এরা শুধু দুনিয়ায় সঞ্চয় করছে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত আমি এদের কাছে পার্থিব কিছুই চাইব না এবং দ্বীন ইসলাম সম্পর্কেও এদের কিছু জিজ্ঞেস করবো না। (বুখারি, হাদিস-১১০৩)

হযরত আসমা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে খেদমতে সম্পদ বৃদ্ধির ব্যাপারে উল্লেখ আছে। একদা নবী করিম (সাঃ)-এর নিকট আসলে তিনি বললেন, সম্পদ থলেতে আবদ্ধ করে রেখোনা, তাহলে আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে আবদ্ধ করে রাখবেন। যতটুকু সাধ্যে কুলায় খেদমত কর। (বুখারি, হাদিস-১১৩৫)