সুন্নাহঃ রাসুলেপাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী ও কর্ম

ইসলামে পবিত্র কুরআন মজিদের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো সুন্নাহ। সুন্নাহ অর্থ রাসুলেপাক (সাঃ)-এর মুখ নিঃসৃত পবিত্র বাণী, কর্ম ও তাঁর সমর্থিত রীতিনীতি, আদেশ-নিষেধ এবং মৌন সম্মতি। এ সুন্নাহ মূলত কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা। সুন্নাহকে হাদিস নামেও অভিহিত করা হয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআন মজিদে বিভিন্ন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। আর রাসুল (সাঃ) এসব বিষয়সমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন, কিভাবে বাস্তবে সম্পাদন করা যায় তার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুল (সাঃ)-এর এই বাস্তব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং দিকনির্দেশনাই হলো সুন্নাহ বা হাদিস। এ সুন্নাহ বা হাদিস আল-কুরআনের পরিপূরক। মহাঅনুগ্রহকারী আল্লাহ বলেছেন,

ٱلْبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِ وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسُِ

অর্থ: এবং আমি আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি যেন আপনি মানুষদের নিকট বর্ণনা করেন (সুস্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেন), যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা আন-নাহল, আয়াত-৪৪)

কিছু উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। পবিত্র কুরআন মজিদে ঈমান এনে মুসলমান হবার কথা বলা হয়েছে আর এ জন্য বায়আতকে ফরয (সূরা আল-ফাতহ, আয়াত-১০; সূরা আল- মুমতাহিনাহ, আয়াত-১২) করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি কিভাবে বায়আত গ্রহণ করে প্রথমে মুসলমান হবে, তারপর কিভাবে মুমিন হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা কিন্তু পবিত্র কুরআনে নেই, বরং রাসুল (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পর সুদীর্ঘ তেইশ বছর ধরে এ আনুষ্ঠানিকতাগুলো বাস্তবে করে দেখিয়েছেন। এছাড়া পবিত্র কুরআনে সালাত কায়েম করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোথায়, কিভাবে, কোন সময়ে সালাত আদায় করতে হবে; এর শরীয়ত, মারেফত বা হকিকত কি এর কোন পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা কুরআনে নেই। রাসুল (সাঃ) তাঁর সাহাবী (রাঃ) গণকে হাতে কলমে তা শিখিয়েছেন। নিম্মোক্ত সূরাগুলোয় হাদিসের প্রয়োজনীয়তা বর্ণিত হয়েছেঃ

সূরা আল-ইমরান

قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَٰفِرِينَُ

অর্থ: আপনি বলে দিন, “হুকুম মান্য করো আল্লাহ ও রাসুলের। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসেন না। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-৩২)

সূরা নিসা

مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ُ

অর্থ: যে ব্যক্তি রাসুলের নির্দেশ মান্য করেছে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করেছে এবং যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তবে আমি আপনাকে তাদের রক্ষা করার জন্য প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা, আয়াত-৮০)

সূরা নিসা

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا ُ

অর্থ: হে মাহবুব! আপনার রবের শপথ, তারা মুসলমান হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত পরস্পরের ঝগড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বিচারক মানবে না, অতঃপর যা কিছু আপনি নির্দেশ করবেন, তাদের অন্তরে সে সম্পর্কে কোন দ্বিধা পাবেনা এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেবে। (সূরা নিসা, আয়াত-৬৫)

সূরা মায়েদা

يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَعْفُوا۟ عَن كَثِيرٍ قَدْ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٌ وَكِتَٰبٌ مُّبِينٌ ُ

অর্থ: হে কিতাবীরা! নিশ্চয় তোমাদের নিকট আমার এ রাসুল তশরীফ এনেছেন, যিনি তোমাদের নিকট প্রকাশ করে দেন ওই সব বস্তু থেকে এমন অনেক কিছু, যেগুলো তোমরা কিতাবের মধ্যে গোপন করে ফেলেছিলে এবং অনেক কিছু ক্ষমা করে থাকেন। নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা “নূর” এসেছে এবং স্পষ্ট কিতাব। (সূরা মায়েদা, আয়াত-১৫)

সূরা আশ-শুরা

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا مَا كُنتَ تَدْرِى مَا ٱلْكِتَٰبُ وَلَا ٱلْإِيمَٰنُ وَلَٰكِن جَعَلْنَٰهُ نُورًا نَّهْدِى بِهِۦ مَن نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَا وَإِنَّكَ لَتَهْدِىٓ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ ُ

অর্থ: এবং এভাবে আমি আপনার প্রতি ওহী করেছি এক প্রাণ সঞ্চারক বস্তু আপন নির্দেশে; এর পূর্বে না আপনি কিতাব জানতেন, না শরীয়তের বিধানাবলীর বিস্তারিত বিবরণ। হ্যাঁ, আমি সেটাকে ভালো করেছি, যা দ্বারা আমি পথ দেখাই আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করি। এবং নিশ্চয় নিশ্চয় আপনি সোজা পথ বাতলিয়ে দেন। (সূরা আশ-শুরা, আয়াত-৫২)

সূরা আন-নাজম

وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلْهَوَىٰٓ ُ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْىٌ يُوحَىٰ ُُ

অর্থ: ৩. এবং তিনি কোন কথা নিজ প্রবৃত্তি থেকে বলেন না। ৪. তা তো ওহীই, যা তাঁর প্রতি (নাযিল) করা হয়। (সূরা আন-নাজম, আয়াত-৩,৪)

পরিশেষে এ কথা স্পষ্টরূপে প্রতিয়মান যে, কুরআন ও হাদিস সবই আল্লাহর ওহী। কুরআন হচ্ছে প্রকাশ্য ওহী আর হাদিস হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত অপ্রকাশ্য ওহী। সুতরাং শেষ নবী রাসুলেপাক (সাঃ)-এর বাণী ও আদেশ অনুসরণ করা কেয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষের জন্য একান্ত আবশ্যক। কারণ রাসুল (সাঃ)-এর অনুসরণ ও আনুগত্য করলে প্রকারান্তরে মহান রব আল্লাহরই আনুগত্য করা হয়, যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমাদের নবী প্রেমের পরিপূর্ণতার জন্য একান্ত আবশ্যক।