রাসুলেপাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর এবং সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তিনি নিখিল বিশ্ব সৃষ্টির ওসিলা এবং রহমাতুল্লিল আলামীন (সমগ্র জগৎ-এর জন্য রহমত স্বরূপ)। তিনি মহান আল্লাহর পবিত্র নূর মুবারক হতে সৃষ্ট এবং বিশ্বের যাবতীয় সৃষ্টিই তাঁর পবিত্র নূর মুবারক হতে সৃষ্ট। রাসুলেপাক (সাঃ)- এর অনেক নামের মধ্যে মুহাম্মদ এবং আহমদ নামই বেশী পরিচিত। মুহাম্মদ নামের অর্থ চরম প্রশংসিত এবং আহমদ শব্দের অর্থ চরম প্রশংসাকারী। তিনি একদিকে আল্লাহর পরিপূর্ণ মহব্বতে বিশুদ্ধ ইবাদত এবং ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দ্বারা আল্লাহর সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি এবং সান্নিধ্য লাভ করে সুখ্যাতির চরম সীমায় পৌঁছেছিলেন, অন্যদিকে নিখিল বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টিতে পূর্ণাঙ্গ আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রশংসার চুড়ান্ত লাভ করেছিলেন। এ জন্য তিনি চরম প্রশংসিত। আবার তিনি আল্লাহর পরিচয়ের চরম সীমায় উপনীত হয়ে মহান আল্লাহর যে প্রশংসা ও পরিচয় প্রদান করেছিলেন তা মানুষের পক্ষে সর্বোচ্চ, এ জন্য তিনি চরম প্রশংসাকারী। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কেউ এ দুই নামের অধিকারী হয়নি এবং কেয়ামত পর্যন্ত কেউ হবেও না।
সমগ্র বিশ্বে যখন তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, বেদ, বাইবেল প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ বিকৃত ও রূপান্তরিত হয়ে আল্লাহর একেশ্বরবাদ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো; যখন এক আল্লাহর ইবাদত বন্ধ হয়ে তাঁরই বিভিন্ন সৃষ্টি যেমন- প্রতিমা, প্রকৃতি, প্রতীক, পুরোহিত, ভুত-প্রেত, বিভিন্ন জড় পদার্থ, চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রের পূজা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিলো; যখন রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও নৈতিক শৃংখলার অভাব হওয়ায় অবিচার, অত্যাচার, ব্যভিচার, কলহ-বিবাদ, কন্যা শিশু জ্যান্ত পুতে ফেলা ইত্যাদি অনাচার সর্বগ্রাসী রূপ গ্রহণ করেছিলো- সেই অসত্যের গভীর অন্ধকার দূর করতে মরুময় আরবে হিজরী সালের (৫৭০ খ্রীষ্টাব্দ) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে বিখ্যাত কুরাইশ বংশের বনি হাশিম গোত্রে অভূতপূর্ব নূরের সূর্যরূপে তশরীফ আনেন শ্রেষ্ঠ পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর জ্যোতির্ময় নূরের প্রভাবে দলে দলে মানুষ অসত্য বিচরণ বন্ধ করে শান্তিময় ইসলামের পতাকাতলে জড়ো হতে শুরু করে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পূর্ববর্তী সকল পয়গম্বরগণ এ পৃথিবীতে তশরীফ এনেছিলেন তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের হেদায়েতের (পথ নির্দেশ) জন্য। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ সূরা ফাতির-এর ২৪ নং আয়াত এবং সূরা রাদ-এর ৭ নং আয়াতে প্রত্যেক সম্প্রদায় বা জাতির মধ্যে একজন করে পথপ্রদর্শক বা হাদী বা সতর্ককারী প্রেরণের কথা উল্লেখ করেছেন। আর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে সর্বশ্রোতা আল্লাহ বলেছেন,
وَما أَرسَلنٰكَ إِلّا كافَّةً لِلنّاسِ بَشيرًا وَنَذيرًا وَلٰكِنَّ أَكثَرَ النّاسِ لا يَعلَمونَُ
অর্থ: হে মাহবুব! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি এমন রিসালাত সহকারেই, যা সমগ্র মানব জাতিকে পরিব্যাপ্ত করে দেয় সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী রূপে, কিন্তু অনেক লোক জানে না। (সূরা সাবা, আয়াত-২৮)
সম্মানদানকারী আল্লাহ বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলী ও প্রশংসনীয় গুণের ব্যাপারে ইরশাদ করেন,
وَإِنَّكَ لَعَلىٰ خُلُقٍ عَظيمٍُ
অর্থ: নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত। (সূরা আল ক্বালাম, আয়াত-৪)
সৎপথ প্রদর্শক আল্লাহ দয়াল নবীর ইসলামের সত্য তরিকা বা পথে অবিচল থাকার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন,
ما ضَلَّ صاحِبُكُم وَما غَوىُُٰ
অর্থ: তোমাদের ‘সাহিব’ এ রাসুল পথভ্রষ্ট হননি এবং ভ্রান্তপথও অবলম্বন করেননি। (সূরা আন নাজম, আয়াত-২)। সাহিব অর্থ সাথী অর্থাৎ রাসুলেপাক (সাঃ) ইহকাল ও পরকালের সর্বসময়ের সঙ্গী।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ পয়গম্বর বলেই তাঁর পূর্ববর্তী পয়গম্বর (আঃ) গণের ধর্মগ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা ও আগমনীবার্তা ঘোষিত হয়েছিলো। হিন্দুদের অথর্ব্ববেদীয় উপনিষদে, ভবিষ্যপুরাণে ভোজরাজ উপাচে, আল্লা উপনিষদে, শামবেদ ও অথর্ব্ববেদে রাসুল (সাঃ)-এর প্রশংসা ও আগমনীবার্তা লিখিত আছে। বৌদ্ধদের প্রামান্য গ্রন্থ দিঘানিকার, পারশিকদের ধর্ম গ্রন্থ জেন্দ আবেস্তায় ও দশাতীরে, ইহুদীদের ধর্ম গ্রন্থ তাওরাতে এবং খ্রিষ্টানদের ধর্ম গ্রন্থ বাইবেলে রাসুল (সাঃ)-এর প্রশংসা এবং আগমনীবার্তা লিপিবদ্ধ আছে।
মূর্তিপূজার মুলোৎপাটন করা, একত্ববাদী, দ্বিত্ববাদী, ত্রিত্ববাদী এবং বহুত্ববাদীদের ভ্রম ও কুসংস্কার দূর করে তৌহিদের বাণী প্রচার করে খাঁটি ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠা করাই ছিলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনের উদ্দেশ্য। চল্লিশ বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন নবুয়ত লাভ করেন তখন মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহ তাঁকে কালেমা তয়্যেবা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” প্রদান করেন এবং এ দ্বারা বিপদগামী ও পথভ্রষ্ঠ মানুষকে বায়আত করিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতঃ মুমিন মুসলমান বানানোর নির্দেশ দেন। দয়াল নবী রাসুল (সাঃ) তাঁর সারা জীবন এ কালেমা দিয়েই বায়আত করিয়ে সাহাবী (রাঃ) গণকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করান এবং খাঁটি ঈমানদার তৈরি করেন। মূলত রাসুল (সাঃ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন, সব কিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকে ঈমান বলে। রাসুল (সাঃ)-এর অভিমুখী হওয়া ঈমানের পূর্বশর্ত। রাসুল (সাঃ)-এর আনীত বিধানের নামই ইসলাম। আর ইসলামের মূল ভিত্তি হলো কালেমা, যার অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল।
যখন কোন ব্যক্তি রাসুল (সাঃ)-এর কাছে তওবা করে কালেমার মাধ্যমে বায়আত গ্রহণ করে মুসলমান হতেন, তখন তিনি রাসুল (সাঃ)-এর আনীত কালেমা মৌখিক স্বীকৃতির সাথে সাথে অন্তর বা ক্বলবে বিশ্বাস স্থাপন করতেন। ফলে রাসুল (সাঃ)-এর নূরের তাওয়াজ্জোহতে বায়আত গ্রহণকারী ব্যক্তির পাপাচারের কারণে অন্ধকার হয়ে যাওয়া ক্বলবের তমসা নিমিষেই দূরীভূত হয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে নবজাতক শিশুর মতো পাক-পবিত্র হয়ে যেতো। এজন্য ইসলামে মানুষের অন্তঃকরণ বা ক্বলব স্বচ্ছ, নির্মল ও পরিশুদ্ধ করার প্রতি সর্বপ্রথমে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ মানুষের সকল কর্মের উৎস তার ক্বলব (আন্তঃকরণ)। এ ক্বলব পরিশুদ্ধির জন্য আনুষ্ঠানিকতা শুরুর নামই বায়আত যা দ্বারা সত্য সন্ধানী মানুষ ইসলামে নিজেকে অন্তর্ভূক্ত করেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “মানবদেহে রয়েছে একটি মাংসপিন্ড, সেটি সুস্থ থাকলে পুরো দেহ সুস্থ থাকে আর সেটি বিনষ্ট হলে পূর্ণ দেহ বিনষ্ট হয়; সেটি হলো ক্বলব”। এ ক্বলব মানবদেহের বাম স্তনের দুই আঙুল নিচে অবস্থান করে। কেউ যখন বায়আত গ্রহণ করতেন রাসুল (সাঃ)-এর কাছে, তখন রাসুল (সাঃ) তার ক্বলবে আসীন হতেন। হুজুর হলেন রাসুল (সাঃ), যার অর্থ মহাসম্মানিত। এই হুজুরী ক্বলবেই রাসুল (সাঃ) নামায পড়তে আদেশ করেছেন যা পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে। এ কারণেই রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “কুলুবিন মুমিনিন আরশাল্লাহ, অর্থ- আল্লাহর আরশ মুমিনের ক্বলবে”। এ বায়আতের আধ্যাত্মিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশের প্রক্রিয়া নক্শবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার আউলিয়ার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত চলমান আছে এবং ঈমাম মেহেদী (আঃ) আসা পর্যন্ত চলতে থাকবে। পবিত্র কুরআনে ক্বলবের পবিত্রতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে মহাপবিত্র আল্লাহ বলেছেন,
قَد أَفلَحَ مَن زَكّىٰها ُ وَقَد خابَ مَن دَسّىٰها ُ
অর্থ: ৯. সফলকাম হয়েছে সেই ব্যক্তি যে তার অন্তরকে (ক্বলব) পবিত্র করেছে, ১০. এবং ব্যর্থ হয়েছে সে, যে সেটাকে পাপের মধ্যে আচ্ছন্ন করেছে। (সূরা আশ-শামস্, আয়াত-৯,১০)
নবী করিম (সাঃ) প্রেরিত হয়েছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে এবং শেষ আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআন দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে তাঁর উপর নাযিল হয়েছে।
রূহের জগৎ-এ মহান আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আত্মাকে কেন্দ্র করেই সকল নবী-রাসুল (আঃ) গণের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে সর্বত্র বিরাজমান আল্লাহ এ আধ্যাত্মিক ইতিহাস বর্ণনা করেছেন,
وَإِذ أَخَذَ اللَّهُ ميثٰقَ النَّبِيّۦنَ لَما ءاتَيتُكُم مِن كِتٰبٍ وَحِكمَةٍ ثُمَّ جاءَكُم رَسولٌ مُصَدِّقٌ لِما مَعَكُم لَتُؤمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ قالَ ءَأَقرَرتُم وَأَخَذتُم عَلىٰ ذٰلِكُم إِصرى قالوا أَقرَرنا قالَ فَاشهَدوا وَأَنا۠ مَعَكُم مِنَ الشّٰهِدينَُ
অর্থ: স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে তাঁদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন১, আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো, অতঃপর তশরীফ আনবেন তোমাদের নিকট২ ওই রাসুল (সাঃ), যিনি তোমাদের কিতাব গুলোর সত্যায়ন করবেন৩, তখন তোমরা (নবী-রাসুল আলাইহিসসাল্লামগণ) নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁর (সাঃ) উপর ঈমান আনবে৪ এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ ইরশাদ করলেন, “তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করলে”? সবাই আরয করলো, “আমরা স্বীকার করলাম”। আল্লাহ ইরশাদ করলেন, “তবে (তোমরা) একে অপরের সাক্ষী হয়ে যাও এবং আমি নিজেই তোমাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম”। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-৮১)
উপরোক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে-
১. হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সকলের কাছ থেকে আল্লাহ অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং নবী (আঃ) গণের অঙ্গীকারের মাধ্যমে স্বীয় উম্মতদের অঙ্গীকারও হয়ে গেছে। কেননা, উম্মত পয়গম্বরেরই অধীনস্থ হয়। ঈমামের চুক্তি গোটা সম্প্রদায়েরই চুক্তির সামিল।
২. রাসুল (সাঃ) পূর্ব ও পরবর্তী সবারই নিকট তশরীফ এনেছেন। পূর্ব ও পরবর্তী সবাই মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উম্মত। তিনি (সাঃ) সকল নবী-রাসুল (আঃ) গণেরও নবী। এ কারণে সমস্ত নবী (আঃ) গণ মেরাজের রাতে রাসুল (সাঃ)-এর পেছনে নামায পড়েছেন। নামাযও পড়েছেন মুহাম্মদী নামায, ঈসায়ী কিংবা মুসায়ী নামায পড়েননি।
৩. রাসুল (সাঃ) এবং সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআনের পর কোন নবী ও কোন কিতাব আসবে না। সমস্ত আসমানি গ্রন্থ ও নবী (আঃ) গণের সত্যায়ন তাই সর্বশেষ নবী হিসেবে রাসুলেপাকই (সাঃ) করেছেন। সত্যায়ন করা হয় পূর্ববতীদের আর সুসংবাদ দেয়া হয় পরবর্তীদের।
৪. সমস্ত নবী-রাসুল (আঃ) গণ ওই দিন রাসুলেপাক (সাঃ)-এর উপর ঈমান এনেছেন।
নবী করিম (সাঃ)-এর আগমনের মাধ্যমে নবী-রাসুল (আঃ) গণের আগমনের ধারা সমাপ্ত হয়ে যায়। সুতারং তিনিই (সাঃ) শেষ নবী এবং রাসুল। এ বিষয়ে সর্বদর্শী আল্লাহ ইরশাদ করেন,
ما كانَ مُحَمَّدٌ أَبا أَحَدٍ مِن رِجالِكُم وَلٰكِن رَسولَ اللَّهِ وَخاتَمَ النَّبِيّۦنَ وَكانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمًاُُ
অর্থ: মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে করো পিতা নন, বরং আল্লাহর রাসুল এবং সমস্ত নবীর মধ্যে সর্বশেষ। আর আল্লাহ সবকিছু জানেন। (সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৪০)
একই বিষয়ে রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, “আমিই শেষ নবী। আমার পরে কোন নবী নেই”। (মুসলিম)। রাসুলেপাক (সাঃ) আরো বলেছেন, “অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। তারা প্রত্যেকেই নবী হবার দাবী করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পর আর কোন নবী আসবে না”। (আবু দাউদ)
দয়াল নবী হুজুরেপাক (সাঃ)-এর আগমনের পর পূর্ববর্তী সকল আসমানি গ্রন্থ এবং সকল নবী (আঃ) গণের শিক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু তাঁদের সকলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। এ ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন,
ءامَنَ الرَّسولُ بِما أُنزِلَ إِلَيهِ مِن رَبِّهِ وَالمُؤمِنونَ كُلٌّ ءامَنَ بِاللَّهِ وَمَلٰئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَينَ أَحَدٍ مِن رُسُلِهِ ُ
অর্থ: রাসুল ঈমান এনেছেন সেটার উপর, যা তাঁর রবের নিকট থেকে তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনগণও। সবাই মেনে নিয়েছে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসুলগণকে, এ কথা বলে যে, আমরা তাঁর কোন রাসুলের উপর ঈমান আনার মধ্যে তারতম্য করি না। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৮৫)
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন,
قُل يٰأَيُّهَا النّاسُ إِنّى رَسولُ اللَّهِ ُ
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন, “হে মানবকুল! আমি তোমাদের সকলের জন্যই আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত”। (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-১৫৮)
দয়াময় আল্লাহ আরো বলেছেন,
وَما أَرسَلنٰكَ إِلّا رَحمَةً لِلعٰلَمينَ ُ
অর্থ: (হে নবী) আমি তো আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতরূপেই (রহমাতাল্লিল আলামীন) প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)
আর রাসুল (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআনের মহাগুরুত্ব সম্পর্কে পরম করুণাময় আল্লাহ ইরশাদ করেন,
إِنَّ فى هٰذا لَبَلٰغًا لِقَومٍ عٰبِدينَُ
অর্থ: নিশ্চয় এ কুরআন যথেষ্ট ইবাদতকারীদের জন্য (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৬)। সুতরাং রাসুল আহমদ (সাঃ) হলেন সর্বকালের নবী। কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমন করবে সকলের নবী তিনিই। তাঁর শিক্ষা, আদর্শ ও আনীত কিতাব আল-কুরআন সকলকেই অনুসরণ করতে হবে।
সর্বজ্ঞ ও সৎপথ প্রদর্শক আল্লাহ পবিত্র কুরআনে রাসুল (সাঃ)-এর মর্যাদা, তাঁর আনীত ধর্ম ইসলাম এবং এ ইসলামের বিজয় গাঁথা উল্লেখ করে বলেছেন,
هُوَ الَّذى أَرسَلَ رَسولَهُ بِالهُدىٰ وَدينِ الحَقِّ لِيُظهِرَهُ عَلَى الدّينِ كُلِّهِ وَلَو كَرِهَ المُشرِكونَُ
অর্থ: তিনিই আল্লাহ, যিনি আপন রাসুলকে হেদায়েত (পথনির্দেশ) ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন এজন্য যে, সেটাকে অন্য সমস্ত দ্বীনের উপর বিজয়ী করবেন, যদিও অপ্রীতিকর মনে করে মুশরিকরা (অংশীবাদীরা)। (সূরা তওবা, আয়াত-৩৩)
এ ব্যাপারে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন,
هُوَ الَّذى أَرسَلَ رَسولَهُ بِالهُدىٰ وَدينِ الحَقِّ لِيُظهِرَهُ عَلَى الدّينِ كُلِّهِ وَكَفىٰ بِاللَّهِ شَهيدًا ُ
অর্থ: তিনিই, যিনি আপন রাসুলকে সঠিক হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে সেটাকে সমস্ত দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আল-ফাতহ, আয়াত-২৮)
বিজয়দানকারী আল্লাহ দয়াময় নবী (সাঃ)-এর শান, মান ও মর্যাদা অঙ্কিত করে যেসব আয়াত নাযিল করেছেন, তার কিছু নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
সূরা আল-আহযাব
يٰأَيُّهَا النَّبِىُّ إِنّا أَرسَلنٰكَ شٰهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذيرًا ُ وَداعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذنِهِ وَسِراجًا مُنيرًا ُ
অর্থ: ৪৫. হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাজির-নাজির করে, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে। ৪৬. এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহ্বানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে। (সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৪৫,৪৬)
সূরা আল-ফাতহ
إِنّا أَرسَلنٰكَ شٰهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذيرًا ُ لِتُؤمِنوا بِاللَّهِ وَرَسولِهِ وَتُعَزِّروهُ وَتُوَقِّروهُ وَتُسَبِّحوهُ بُكرَةً وَأَصيلًاُ ُ ُ
অর্থ: ৮. নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাজির-নাজির এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে। ৯. যাতে হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর ঈমান আনো এবং রাসুলের মহত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা আল-ফাতহ, আয়াত-৮,৯)
সূরা মুয্যাম্মিল
إِنّا أَرسَلنا إِلَيكُم رَسولًا شٰهِدًا عَلَيكُم كَما أَرسَلنا إِلىٰ فِرعَونَ رَسولًا ُ
অর্থ: নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি একজন রাসুল প্রেরণ করেছি, যিনি তোমাদের উপর হাজির-নাজির; যেভাবে আমি ফেরাউনের প্রতি রাসুল প্রেরণ করেছি। (সূরা মুয্যাম্মিল, আয়াত-১৫)
সূরা নিসা
يٰأَيُّهَا النّاسُ قَد جاءَكُمُ الرَّسولُ بِالحَقِّ مِن رَبِّكُم فَـٔامِنوا خَيرًا لَكُم وَإِن ُ
অর্থ: হে মানবজাতি! তোমাদের নিকট এ রাসুল সত্য সহকারে তোমাদের রবের নিকট থেকে শুভাগমন করেছেন, সুতরাং ঈমান আনো তোমাদের কল্যাণার্থে। (সূরা নিসা, আয়াত-১৭০)
সূরা বাকারা
كَما أَرسَلنا فيكُم رَسولًا مِنكُم يَتلوا عَلَيكُم ءايٰتِنا وَيُزَكّيكُم وَيُعَلِّمُكُمُ الكِتٰبَ وَالحِكمَةَ وَيُعَلِّمُكُم ما لَم تَكونوا تَعلَمونَ ُ
অর্থ: যেমন আমি তোমাদের মধ্যে প্রেরণ করেছি একজন রাসুল তোমাদের মধ্যে থেকে, যিনি তোমাদের উপর আমার আয়াত গুলো তেলওয়াত করেন, তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও পরিপক্ক জ্ঞান শিক্ষা দেন। আর তোমাদের ওই শিক্ষা দান করেন, যার জ্ঞান তোমাদের ছিলোনা। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৫১)
وَكَذٰلِكَ جَعَلنٰكُم أُمَّةً وَسَطًا لِتَكونوا شُهَداءَ عَلَى النّاسِ وَيَكونَ الرَّسولُ عَلَيكُم شَهيدًاُُ
অর্থ: এবং কথা হলো এই যে, আমি তোমাদেরকে সব উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির উপর সাক্ষী হও। আর এ রাসুল তোমাদের রক্ষক ও সাক্ষী। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৪৩)
সূরা নিসা
فَكَيفَ إِذا جِئنا مِن كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهيدٍ وَجِئنا بِكَ عَلىٰ هٰؤُلاءِ شَهيدًا ٌ
অর্থ: তবে কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো? এবং হে মাহবুব! আপনাকে তাদের সবার উপর সাক্ষী এবং পর্যবেক্ষণকারী রূপে উপস্থিত করবো। (সূরা নিসা, আয়াত-৪১)
রাসুল (সাঃ)-এর দ্বীনের প্রতিটি বিধান মধ্যম, এ দ্বীনে যেমনি মুসা (আঃ)-এর দ্বীনের মতো কঠোরতা নেই, তেমনি ঈসা (আঃ)-এর দ্বীনের মতো শিথিলতাও নেই।
মহান আল্লাহ কেয়ামত পর্যন্ত মানুষকে সরল পথে আনয়নের লক্ষ্যে প্রেরণ করেছেন রাসুল (সাঃ) কে হাজির-নাজির নূর রূপে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
فَأَمَّا الَّذينَ ءامَنوا بِاللَّهِ وَاعتَصَموا بِهِ فَسَيُدخِلُهُم فى رَحمَةٍ مِنهُ وَفَضلٍ وَيَهديهِم إِلَيهِ صِرٰطًا مُستَقيمًا ٌ ُ
অর্থ: হে মানবকুল, নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জ্বল আলো (নূর) অবতীর্ণ করেছি। (সূরা নিসা, আয়াত-১৭৫)
রাসুলেপাক (সাঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য মহাঅনুগ্রহ এবং তাঁর (সাঃ) উম্মতের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা সম্পর্কে মহিমান্বিত আল্লাহ ইরশাদ করেন,
قَد جاءَكُم مِنَ اللَّهِ نورٌ وَكِتٰبٌ مُبينٌ ٌ يَهدى بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضوٰنَهُ سُبُلَ السَّلٰمِ وَيُخرِجُهُم مِنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النّورِ بِإِذنِهِ وَيَهديهِم إِلىٰ صِرٰطٍ مُستَقيمٍ ٌ
অর্থ: ১৫. নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা “নূর” এসেছে এবং স্পষ্ট কিতাব, ১৬. আল্লাহ তা দ্বারা সরল পথ প্রদর্শন করেন তাকেই যে আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক চলে নিরাপত্তার পথে এবং তাদেরকে অন্ধকাররাশি থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান স্বীয় নির্দেশে; এবং তাদেরকে সরল পথ দেখান। (সূরা মায়েদা, আয়াত-১৫,১৬)
একই ব্যাপারে মহাঅনুগ্রহকারী আল্লাহ বলেন,
لَقَد جاءَكُم رَسولٌ مِن أَنفُسِكُم عَزيزٌ عَلَيهِ ما عَنِتُّم حَريصٌ عَلَيكُم بِالمُؤمِنينَ رَءوفٌ رَحيمٌُ
অর্থ: নিশ্চয় তোমাদের নিকট তশরীফ এনেছেন তোমাদের মধ্য থেকে ওই রাসুল, যার নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পূর্ণ দয়ার্দ্র, দয়ালু। (সূরা তওবা, আয়াত-১২৮)
নবী করিম (সাঃ)-এর মর্যাদাশীল গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সকল সম্মান ও গৌরবের অধিকারী আল্লাহ বলেন,
النَّبِىُّ أَولىٰ بِالمُؤمِنينَ مِن أَنفُسِهِم وَأَزوٰجُهُ أُمَّهٰتُهُم وَأُولُوا الأَرحامِ ٌ
অর্থ: এ নবী মুসলমানদের কাছে তাদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশী মালিক এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। (সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৬)
মালিক মানে বেশী মালিকানা-বিশিষ্ট, বেশী নিকটে, বেশী হক্বদার। এটাও বুঝা যায় যে, রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে হাজির ও নাজির অর্থাৎ প্রাণ অপেক্ষাও নিকটে। একথাও বুঝা গেলো যে, হুজুরের (সাঃ) হুকুম প্রত্যেক বাদশাহ্ ও মাতা-পিতার নির্দেশ অপেক্ষা বেশী কার্যকর। হুজুর (সাঃ) আমাদের সর্বাপেক্ষা বেশী মালিক। এ জন্যই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,
قُل بِفَضلِ اللَّهِ وَبِرَحمَتِهِ فَبِذٰلِكَ فَليَفرَحوا هُوَ خَيرٌ مِمّا يَجمَعونَ ٌ
অর্থ: আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া, সেটার উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। তা তাদের সমস্ত ধনদৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৮)। এখানে অনুগ্রহ ও দয়া বলতে রাসুল (সাঃ) ও পবিত্র কুরআনকে বোঝানো হয়েছে।
একই ব্যাপারে মহাঅনুগ্রহকারী আল্লাহ বলেন,
وَما أَرسَلنا مِن رَسولٍ إِلّا لِيُطاعَ بِإِذنِ اللَّهِ وَلَو أَنَّهُم إِذ ظَلَموا أَنفُسَهُم جاءوكَ فَاستَغفَرُوا اللَّهَ وَاستَغفَرَ لَهُمُ الرَّسولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوّابًا رَحيمًا ٌ فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤمِنونَ حَتّىٰ يُحَكِّموكَ فيما شَجَرَ بَينَهُم ثُمَّ لا يَجِدوا فى أَنفُسِهِم حَرَجًا مِمّا قَضَيتَ وَيُسَلِّموا تَسليمًا ٌ
অর্থ: ৬৪. এবং আমি কোন রাসুল প্রেরণ করিনি কিন্তু এ জন্য যে, আল্লাহর নির্দেশে তাঁর আনুগত্য করা হবে, আর যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি জুলুম করে, তখন হে মাহবুব! (তারা) আপনার দরবারে হাজির হয়, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসুল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অত্যন্ত তওবা কবুলকারী, দয়ালু পাবে। ৬৫. সুতরাং হে মাহবুব! আপনার রবের শপথ, তারা মুসলমান হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পরস্পরের ঝগড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বিচারক মানবে না, অতঃপর যা কিছু আপনি নির্দেশ করবেন, তাদের অন্তরে সে সম্পর্কে কোন দ্বিধা পাবেনা এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেবে। (সূরা নিসা, আয়াত-৬৪,৬৫)
উপরোক্ত আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট প্রতিয়মান যে, নবী প্রেম হলো ঈমানের মূল। নবীজির (সাঃ) শাফাআত ছাড়া কেউ কোন কিছু অর্জন করবে না। তরিকতের জগৎ এ সাধনার একটি স্তর রয়েছে, যার নাম ফানাফির রাসুল অর্থাৎ প্রতিটি কাজে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি মহব্বত থাকতে হবে। রাসুল (সাঃ)-এর মহব্বত ছাড়া ফানাফির রাসুল অর্জন করা সম্ভব নয়। সাহাবী (রাঃ) গণ রাসুল (সাঃ) কে নিজেদের প্রাণের চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন। হিজরত করতে হবে বলে হযরত আবু বকর (রাঃ) কে রাসুল (সাঃ) আদেশ দিয়েছিলেন এবং তাকে হিজরতের সাথী হতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। সেদিন থেকে হযরত আবু বকর (রাঃ) দীর্ঘ কয়েক মাস নবী (সাঃ)-এর মহব্বতে বিছানাতে ঘুমাতে যাননি। তাঁর মনে সব সময় ভয় বা চিন্তা ছিলো, নবী (সাঃ) যেন তাকে ডেকে ফিরে না যান। এছাড়া ইতিহাসে দেখা যায়, হযরত আলী (আঃ) নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাসুল (সাঃ)-এর হিজরতের সময় রাসুল (সাঃ)-এর নিরাপদে মদিনা গমন নিশ্চিত করতে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিছানা মুবারকে চাদর দ্বারা নিজেকে আবৃত করে শুয়ে ছিলেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রেমের অসংখ্য নজির ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যাবে। আল্লাহ স্বয়ং প্রতি মুহুর্তে দরূদ পড়েন রাসুল (সাঃ)-এর প্রতি এবং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না যদি না রাসুল (সাঃ) কে সৃষ্টি করে মহিমান্বিত সৃষ্টিকর্তা তাঁর (সাঃ) শান, মান, মর্যাদা ও মাহাত্য সবার কাছে প্রকাশের ইচ্ছা না করতেন। এ জন্যই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,
قُل إِن كُنتُم تُحِبّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعونى يُحبِبكُمُ اللَّهُ وَيَغفِر لَكُم ذُنوبَكُم وَاللَّهُ غَفورٌ رَحيمٌ ٌ
অর্থ: হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, হে মানবকুল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো তবে আমার অনুসারী হয়ে যাও, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন; আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-৩১)
নবী করিম (সাঃ) স্বয়ং বলেছেন, “উত্তম গুণাবলীর পরিপূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি”। আর তওবা কবুলকারী আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
لَقَد كانَ لَكُم فى رَسولِ اللَّهِ أُسوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَن كانَ يَرجُوا اللَّهَ وَاليَومَ الءاخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثيرًا ٌ
অর্থ: নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসুল (সাঃ)-এর অনুসরণ উত্তম, তারই জন্য, যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে খুব স্মরণ করে। (সূরা আল-আহযাব, আয়াত-২১)