হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রঃ) তাঁর “রাহাতুল মুহিব্বীন” নামক কিতাবে লিখেছেন, “নবী ও কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার সাথে মহব্বত রাখা হাজার বছরের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম”।
হুজুরেপাক (সাঃ) ইরশাদ করেন,
من قال لا اله الا الله الف الف مرة بلا تحقيق فهو كافرُ
অর্থ: তাহকিক (অনুসন্ধান) ব্যতিরেকে কালেমা হাজারবার পড়লেও একজন কাফের হয়ে যাবে। (নিয়ামতে খোদা ও হাকিকতে আউলিয়া)
এ বিষয়ে ঈমাম গাজ্জালী (রঃ) তাঁর “এসলাহে নফ্স” কিতাবে একটি হাদিস শরীফ উল্লেখ করেছেন- “না বুঝে ইবাদতকারী কলুর বলদের ন্যায়”। অর্থাৎ কলুর বলদকে চোখ বেঁধে দেয়া হয়। এরপর সে ঘুরতে থাকে আর মনে করে আমি বুঝি অনেক পথ অতিক্রম করেছি। কিন্তু যখন চোখ খুলে দেয়া হয়, তখন দেখে সে স্বস্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ কোন বিষয় পালন করার পূর্বে সে বিষয়ে তাহকিক করতে হবে এবং এর হকিকত (কোন বিষয়ের মর্ম অবগত হওয়া) জানতে হবে ইবাদতকারীকে।
নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন,
ُ بلا حساب رسول الله مرة بالتحقيق فهو داخل الجنة من قال لا اله الا الله محمد
অর্থ: যে ব্যক্তি কালেমা তয়্যেবাকে তাহকিকের সাথে একবার পড়বে সেই ব্যক্তি বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (নিয়ামতে খোদা, আসরারে এলাহী ও হাকিকতে আউলিয়া)
মুসলমান হতে হলে নবী-রাসুল ও কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার কাছে যেয়ে তওবা পড়ে কালেমা পাঠের মাধ্যমে বায়আতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয় এবং যা দ্বারা এ কালেমার ওপর ঈমান আনা নিশ্চিত হয়। শুধু নিজে নিজে মুখে কালেমা পড়লেই মুসলমান হওয়া যায় না বা জান্নাতে যাওয়া যায় না। ইতিহাসে দেখা গেছে যুদ্ধের সময় ইসলামের অনেক শক্ররা কালেমা পাঠ করেছে কিন্তু তাহকিক করেনি বা অন্তর থেকে ঈমান আনেনি।
পবিত্র কুরআনে সূরা কাহাফে আল্লাহ বলেছেন,
وَمَن يُضلِل فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرشِدًاُُ
অর্থ: এবং আল্লাহ যাকে গোমরাহ্ (পথভ্রষ্ট) করে, অনন্তর তুমি কখনও তার জন্য কোন অলি বা মুর্শিদ (পথ প্রদর্শক) পাবে না। (সূরা কাহাফ, আয়াত-১৭)
পবিত্র কালাম মজিদের এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যার কোন কামেল মুর্শিদ নেই সে নিশ্চিত ভাবেই পথভ্রষ্ট। মার গা কুলুব শামস তিবরিজিতে লেখা আছে, যার পীর নাই তার পীর শয়তান।
কেউ যখন রাসুল (সাঃ) অথবা তাঁর প্রতিনিধি খলিফা বা অলি-আল্লাহদের কাছে তওবা পড়ে ইসলামে প্রবেশের বায়আত গ্রহণ করে তখন মহান আল্লাহ তার জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে জান্নাত প্রদানের নিশ্চিত প্রতিশ্রæতি প্রদান করেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ اشتَرىٰ مِنَ المُؤمِنينَ أَنفُسَهُم وَأَموٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقٰتِلونَ فى سَبيلِ اللَّهِ فَيَقتُلونَ وَيُقتَلونَ وَعدًا عَلَيهِ حَقًّا فِى التَّورىٰةِ وَالإِنجيلِ وَالقُرءانِ وَمَن أَوفىٰ بِعَهدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاستَبشِروا بِبَيعِكُمُ الَّذى بايَعتُم بِهِ وَذٰلِكَ هُوَ الفَوزُ العَظيمُُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ মুসলামানদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের মূল্যের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে অতঃপর তারা হত্যা করবে এবং নিহত হবে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তাতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিজের প্রতিজ্ঞা পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে আর কে ভালো? সুতরাং তোমরা আনন্দ উদযাপন করো নিজেদের ব্যবসার জন্য, যা তোমরা আল্লাহর সাথে করেছো এবং এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তওবা, আয়াত-১১১)
কিছু সংখ্যক আনসারী তওবা পড়ে ইসলামের বায়আত গ্রহণের আর্জি করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার ইচ্ছানুসারে নিজের জন্য ও আল্লাহর জন্য শর্ত নির্ধারণ করুন। আমরা তা যথাযথ ভাবে পূরণ করতে থাকবো”। তদুত্তরে, হুজুর (সাঃ) ইরশাদ করলেন, “আল্লাহর জন্য তো এ শর্ত যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না। আর আমার জন্য এ শর্ত যে, যে বস্তুটি তোমরা নিজেদের জন্য পছন্দ করবে না, তা আমার জন্যও পছন্দ করো না”। তখন তারা বিনীত ভাবে জানতে চাইলো, “এ শর্তগুলো পূরণ করলে আমরা কি পাবো”? তখন রাসুলেপাক (সাঃ) বললেন, “জান্নাত”। তখন আনসাররা বললেন, “এটা তো বড় লাভজনক সওদা”। এ আয়াতটি উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়। (রূহুল বয়ান)
একনিষ্ঠ মনে কেউ যখন পূর্বের সকল পাপের জন্য তওবা করে ইসলাম গ্রহণের বায়আত হয়, তখন তার জন্য মুমিন মুসলমান হিসেবে অন্যান্য ইবাদতের বিষয়টি আসে। তওবার মাধ্যমে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করলেই তাকে নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদতের আদেশ আল্লাহ দিয়েছেন। তওবার আগে আল্লাহ দেননি। সূরা তওবার ১১২ নং আয়াতে মুমিনের কার্যাদির ক্রমবিন্যাস আল্লাহ করেছেন, যেখানে সর্বপ্রথমে তওবার কথাই আল্লাহ বলেছেন,
التّٰئِبونَ العٰبِدونَ الحٰمِدونَ السّٰئِحونَ الرّٰكِعونَ السّٰجِدونَ الءامِرونَ بِالمَعروفِ وَالنّاهونَ عَنِ المُنكَرِ وَالحٰفِظونَ لِحُدودِ اللَّهِ وَبَشِّرِ المُؤمِنينَُ
অর্থ: যারা তওবা করে, ইবাদত করে, আল্লাহর প্রশংসা করে, রোযা পালন করে, রুকু ও সিজদা করে, সৎকার্যের আদেশ দেয়, অসৎকার্যের নিষেধ করে এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা মেনে চলে, তুমি সুসংবাদ দাও সেই মুসলমানদের। (সূরা তওবা, আয়াত-১১২)
অর্থাৎ এ আয়াতে মহান আল্লাহ বললেন পরিষ্কার ভাবে, যে তওবার মাধ্যমে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করলো সেই মুসলমান, বায়আতের আগে মুসলমান (বিশ্বাসী) নয়। আর সকল ইবাদতের পূর্বেই তওবা করতে হবে, আগে ইবাদত নয়।
বায়আত হতে হবে নবী-রাসুল (আঃ) অথবা অলি-আল্লাহ (রঃ)-এর কাছে। বর্তমান জামানায় কোন নবী (আঃ) নেই, তাই সর্বশেষ তরিকা নক্শবন্দি মোজাদ্দেদিয়ার কামেলে মোকাম্মেল পীরের কাছে বায়আত হয়ে মুসলমান হতে হবে। পীর শব্দটি কুরআনে নেই, যেভাবে নেই নামায, যেভাবে নেই রোযা। কারণ এগুলো ফার্সী ভাষার শব্দ। নামাযের আরবী সালাত, রোযার আরবী সওম, এভাবে পীরের আরবী কুরআন শরীফে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে। যথাঃ অলি বহুবচনে আউলিয়া, মুর্শিদ বহুবচনে মুর্শিদুন বা মুর্শিদুনা; ঈমাম বহুবচনে আইম্মা, হাদি বহুবচনে হাদিয়ুন বা হাদিয়ে জামান; সিদ্দিক বহুবচনে সিদ্দিকুন বা সাদেকিন অথবা সিদ্দিকুনা ইত্যাদি। নি¤েœ এ ধরনের শব্দসমেত কিছু আয়াত পেশ করা হলোঃ
সূরা বনী ইসরাইল
يَومَ نَدعوا كُلَّ أُناسٍ بِإِمٰمِهِمُُ
অর্থ: স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের (ঈমাম) নেতাসহ আহবান করবো। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৭১)
সূরা আরাফ
إِنَّ رَحمَتَ اللَّهِ قَريبٌ مِنَ المُحسِنينَُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহপাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগণের নিকটবর্তী। (সূরা আরাফ, আয়াত-৫৬)
সূরা আল-ইমরান
وَلتَكُن مِنكُم أُمَّةٌ يَدعونَ إِلَى الخَيرِ وَيَأمُرونَ بِالمَعروفِ وَيَنهَونَ عَنِ المُنكَرِ وَأُولٰئِكَ هُمُ المُفلِحونَُ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে একটা দল এমন হওয়া চাই, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং অসৎকর্মের ব্যাপারে নিষেধ করবে। আর এসব লোকই (যারা আলীমে দ্বীন বা অলি-আল্লাহ) হবে সফলকাম। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৬৩)
অর্থাৎ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে বা ভৌগলিক অবস্থানের জন্য সবার মধ্যে থেকে একজন পুরোপুরি হক্কানি আলীমে দ্বীন কেয়ামত পর্যন্ত থাকবেন যিনি রাসুল (সাঃ)-এর প্রতিনিধিত্ব করবেন। এরকম ব্যক্তিরাই হলেন অলি-আল্লাহ বা কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া। এই শেষ জামানায় নক্শবন্দি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার যিনি জিন্দা পীর তাঁকেই জামানার মোজাদ্দেদ বলে এবং তিনিই দ্বীন ইসলাম এবং এ দুনিয়ার মালিক। তাঁর দেয়া ধর্মীয় এবং ঐশ্বরিক খবরাখবর নির্ভরযোগ্য। তিনি যে মাস্আলা বলবেন এবং পুরো বিশ্বকে যে দিকনির্দেশনা দেবেন তা সর্বোতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। বর্তমান জামানার যিনি মোজাদ্দেদ বা রাসুলেপাক (সাঃ)-এর প্রতিনিধি তিনিই পারেন আসমান ও যমীনের সকল বালা-মুসিবত এবং গজব থেকে তাঁর উম্মতকে বের করে নিয়ে আসতে। এ জন্য অতি অবশ্যই এ তরিকার সন্ধান যারা পেয়েছেন তারা এ তরিকা আঁকড়ে ধরবেন শক্ত ভাবে কালবিলম্ব না করে এবং এ সত্য তরিকার ব্যাপক প্রচার শুরু করবেন সারা বিশ্বে কথা ও কাজের মাধ্যমে। অন্যথায় মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য- যারা জানলো কিন্তু সত্য তরিকা গ্রহণ না করে অস্বীকার করলো, যারা গ্রহণ করলো কিন্তু প্রচার ও প্রসারে অংশ নিলোনা এবং সর্বোপরি যারা আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)- এর নির্দেশ মতো ওসিলা বা যুগের প্রতিনিধি জামানার মোজাদ্দেদকে অনুসন্ধান বা তালাশ করতে কোনই মেহনত করলো না।
সূরা আল-ফাতহ
إِنَّ الَّذينَ يُبايِعونَكَ إِنَّما يُبايِعونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوقَ أَيديهِمُُ
অর্থ: (আল্লাহপাক নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলেছেন) ওই সব লোক যারা আপনার হাতে বায়আত গ্রহণ করেছে প্রকৃতপক্ষে তারা তো আল্লাহরই হাতে বায়আত গ্রহণ করেছে। (সূরা আল-ফাতহ, আয়াত-১০)
নবী-রাসুল (আঃ) এবং কামেল মুর্শিদ বা আউলিয়া (রঃ)-এর কাছে তরিকা গ্রহণকে ঈমান আনার বায়আত বা ইসলাম গ্রহণের বায়আত বলে। এছাড়া বায়আত বিভিন্ন ধরনের আছে যেমনঃ খলিফা গ্রহণের বায়আত, আনুগত্যের বায়আত, সালাত কায়েমের বায়আত, জিহাদের বায়আত, সাধ্যানুসারে অনুসরণ ও অনুকরণের বায়আত, তওবার বায়আত, তাকওয়ার বায়আত।
সূরা আল-ফাতহ
لَقَد رَضِىَ اللَّهُ عَنِ المُؤمِنينَ إِذ يُبايِعونَكَ تَحتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ ما فى قُلوبِهِم فَأَنزَلَ السَّكينَةَ عَلَيهِم وَأَثٰبَهُم فَتحًا قَريبًاُُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন ঈমানদারদের প্রতি যখন তারা ওই বৃক্ষের নিচে আপনার (রাসুল সাঃ) নিকট বায়আত গ্রহণ করেছিলো। সুতরাং আল্লাহ জেনেছেন যা তাদের অন্তরগুলোয় রয়েছে। অতঃপর তাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করেছেন। (সূরা আল ফাতহ, আয়াত-১৮)
সূরা আল-মুমতাহিনাহ
يٰأَيُّهَا النَّبِىُّ إِذا جاءَكَ المُؤمِنٰتُ يُبايِعنَكَ عَلىٰ أَن لا يُشرِكنَ بِاللَّهِ شَيـًٔا وَلا يَسرِقنَ وَلا يَزنينَ وَلا يَقتُلنَ أَولٰدَهُنَّ وَلا يَأتينَ بِبُهتٰنٍ يَفتَرينَهُ بَينَ أَيديهِنَّ وَأَرجُلِهِنَّ وَلا يَعصينَكَ فى مَعروفٍ فَبايِعهُنَّ وَاستَغفِر لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفورٌ رَحيمٌُ
অর্থ: হে নবী! যখন আপনার সম্মুখে মুসলমান নারীরা হাজির হয় বায়আত গ্রহণের জন্য এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করবে না এবং চুরি করবেনা, না যিনা করবে, না আপন সন্তানদেরকে হত্যা করবে এবং না তারা এই অপবাদ আনবে যাকে আপন হাত ও পাগুলোর মধ্যখানে (প্রজননস্থানে) রচনা করে রটাবে এবং কোন সৎকাজে আপনার নির্দেশ অমান্য করবে না, তখন তাদের নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ করুন। এবং আল্লাহর নিকট তাদের ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা আল- মুমতাহিনাহ, আয়াত-১২)
উপরোক্ত আয়াতগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ চেনার প্রথম ওসিলা আমাদের নবী করিম (সাঃ) তদাভরে আমাদের ওসিলা নায়েবে নবী অর্থাৎ কামেলে মোকাম্মেল পীর বা আউলিয়া। যদি রাসুল (সাঃ)-এর কাছে বায়আত হলে আল্লাহর হাতে বায়আত হওয়া হয় তবে কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার হাতে বায়আত হলে আল্লাহর হাতে বায়আত হওয়া হলো তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ঐরূপ বুজুর্গের নিকটে মহব্বতের সাথে বসলে ও খেদমত করলে মৃত দেল জিন্দা হয়, কেননা জিন্দা যার দেল বা অন্তর (ক্বলব), সে ব্যক্তি মৃত হলেও তার ক্বলব জিন্দা থাকে অর্থাৎ ঐ মৃত ব্যক্তির ক্বলবে আল্লাহর জিকির হরহামেশা চলতেই থাকে। একেই হায়াতে আবাদিয়া হাসিল হওয়া বলে কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার ওসিলায়।
নি¤েœ নবী-রাসুল (আঃ) এবং কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া (রঃ) গণের হাতে বায়আত গ্রহণের অনেকগুলো অকাট্য প্রমাণ হাজির করা হলো ঃ
সূরা ফাতিহা
إِيّاكَ نَعبُدُ وَإِيّاكَ نَستَعينُ ُ اهدِنَا الصِّرٰطَ المُستَقيمَُ
অর্থ: ৫. আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো ৬. তাঁদেরই পথে, যাদের ওপর তুমি অনুগ্রহ করেছো। (সূরা ফাতিহা, আয়াত-৫,৬)
সোজা-সরল পথ হচ্ছে সেই পথ যে পথে আল্লাহর অলিগণ বা কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া ও নেককার বান্দাগণ থাকেন। এ পথ বা রাস্তা বা তরিকা হচ্ছে একমাত্র আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাআত এর মতাদর্শ। আল্লাহর অলিগণ এ মতাদর্শের অনুসরণ করে আসছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাঁরা এ মতাদর্শের ওপর থাকবেন।
সূরা তওবা
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكونوا مَعَ الصّٰدِقينَُ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো। (সূরা তওবা, আয়াত-১১৯)
বুঝা যাচ্ছে, যে দলে আল্লাহর অলি বা কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া আছেন, ঐ দলই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটাই সত্যবাদীদের দল। এ সত্যদলটি হচ্ছে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাআত।
সূরা মায়েদা
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابتَغوا إِلَيهِ الوَسيلَةَ وَجٰهِدوا فى سَبيلِهِ لَعَلَّكُم تُفلِحونَُ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আল্লাহ প্রাপ্তির পথে ওসিলা বা মাধ্যম অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, এ আশায় যে সফলতা পেতে পারো। (সূরা মায়েদা, আয়াত-৩৫)
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে রূহুল বয়ানে বর্ণিত আছেঃ ওসিলা ব্যতীত আল্লাহ প্রাপ্তি সম্ভবপর নয়, আর সেই ওসিলা হলো হক্বানী আলেম অর্থাৎ এল্মে তাছওয়াফের অধিকারী তরিকাপন্থি কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া বা অলি-আল্লাহগণ। এখানে স্মরণ রাখা দরকার, হুজুর আকরাম (সাঃ) এ নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত নন। কেননা তিনি স্বয়ং সবার ওসিলা।
সূরা নিসা
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا أَطيعُوا اللَّهَ وَأَطيعُوا الرَّسولَ وَأُولِى الأَمرِ مِنكُمُُ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর ও তার রাসুলের হুকুম মান্য করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা “উলিল আমর” (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বা সাহেবে হুকুম) তাদেরও হুকুম মান্য করো। (সূরা নিসা, আয়াত-৫৯)
এখানে উলিল আমর বা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বলতে বোঝায়; প্রথমত দ্বীনী হুকুমাতের আসনে আসীন কেউ যেমন- কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া, হক্কানী আলেম, মুর্শিদ-ই কামেল, অলি-আল্লাহ বা পীর কিম্বা দ্বিতীয়ত দুনিয়াবী হুকুমাতের দায়িত্বশীল ব্যক্তি যেমন- ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান ও ইসলামী বিচারকগণ। কিন্তু দ্বীনী বিচারকদের বা অলি আল্লাহদের আনুগত্য বা হুকুম মান্য করা দুনিয়াবী শাসকদের ওপরও অপরিহার্য হবে। অলি-আল্লাহ (রঃ) গণ রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য তথা ফানাফির রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য তথা ফানাফিল্লা হাসিল করেছেন। আল্লাহতায়ালার আনুগত্য হয় রাসুল (সাঃ) কে আনুগত্য বা হুকুম মান্য করার মাধ্যমে আর রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য করা হয় উলিল-আমরের আনুগত্যের বা হুকুম মান্য করার মাধ্যমে। সুতরাং পীর বা অলি-আল্লাহগণের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করলে আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য হয়ে যায়।
সূরা লোকমান
وَاتَّبِع سَبيلَ مَن أَنابَ إِلَىَُّ
অর্থ: আর তারই পথে চলো, যে আমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছে বা পরিপূর্ণভাবে আমাকে পেয়েছে। (সূরা লোকমান, আয়াত-১৫)
এখানে কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া বা অলি-আল্লাহকে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে সাধারণ মানুষকে, যাতে তারা সত্য দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। ঐ দ্বীনই সত্য, যাতে আল্লাহর অলিগণ রয়েছেন। আজ পর্যন্ত আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাআত ব্যতীত ওহাবী, দেওবন্দী, মির্যায়ী, শিয়া, চাকড়ালভী কোন সম্প্রদায়েই আল্লাহর অলি নেই। সুতরাং সেটারই (আহ্লে বায়আত) অনুসরণ করতে হবে।
সূরা বনী ইসরাইল
أُولٰئِكَ الَّذينَ يَدعونَ يَبتَغونَ إِلىٰ رَبِّهِمُ الوَسيلَةَ أَيُّهُم أَقرَبُ وَيَرجونَ رَحمَتَهُ وَيَخافونَ عَذابَهُ إِنَّ عَذابَ رَبِّكَ كانَ مَحذورًاُُ
অর্থ: ওই সব মাক্ববুল বান্দা, যাদেরকে এ সব কাফির পূজা করে, তারা নিজেরাই আপন রবের প্রতি মাধ্যম (ওসিলা বা মুর্শিদ) সন্ধান করে- কে তাদের মধ্যে বেশী নৈকট্য প্রাপ্ত, তাঁর দয়ার আশা রাখে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার রবের শাস্তি ভয়ের বস্তু। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৫৭)
সূরা ইয়াসিন
اتَّبِعوا مَن لا يَسـَٔلُكُم أَجرًا وَهُم مُهتَدونَُ
অর্থ: এমন লোকদের অনুসরণ করো, যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চান না এবং তারা সৎপথের ওপর রয়েছেন। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত-২১)। এমন লোক বলতে হক্কানী আলেম বা কামেলে মোকাম্মেল পীর-মুর্শিদকেই বোঝানো হয়েছে এ আয়াতে, যারা সরল সোজা আল্লাহর পথে সত্যনিষ্ঠ এবং সৎ কর্মপরায়ণ।
সূরা আম্বিয়া
فَسـَٔلوا أَهلَ الذِّكرِ إِن كُنتُم لا تَعلَمونَُ
অর্থ: তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৭)। এখানে জ্ঞানী বলতে সৎপথ প্রাপ্ত তাছওয়াফ সম্পন্ন কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া বা অলি-আল্লাহদের বোঝানো হয়েছে।
সূরা কাহাফ
وَاصبِر نَفسَكَ مَعَ الَّذينَ يَدعونَ رَبَّهُم بِالغَدوٰةِ وَالعَشِىِّ يُريدونَ وَجهَهُ وَلا تَعدُ عَيناكَ عَنهُم تُريدُ زينَةَ الحَيوٰةِ الدُّنيا وَلا تُطِع مَن أَغفَلنا قَلبَهُ عَن ذِكرِنا وَاتَّبَعَ هَوىٰهُ وَكانَ أَمرُهُ فُرُطًاُُ
অর্থ: এবং আপন আত্মাকে তাদেরই সাথে সম্বন্ধযুক্ত রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় আপন রবকে আহবান করে, তাঁর সন্তুষ্টি চায় এবং আপনার চক্ষুদ্বয় যেন তাদেরকে ছেড়ে অন্য দিকে না ফিরে; আপনি কি পার্থিব জীবনের শোভা সৌন্দর্য কামনা করবেন? এবং তার কথা মানবেন না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি এবং সে আপন খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে আর তার কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করে গেছে। (সূরা কাহাফ, আয়াত-২৮)
এখানে এ আয়াতে মহান আল্লাহ রাসুলেপাক (সাঃ) কে সকল যুগে তাদের সাথে সম্পর্কিত থাকতে ও সুদৃষ্টি দিতে বলেছেন যারা ফকির বা দরিদ্র হলেও আল্লাহর জিকির এবং আহবান করা থেকে এক মূহুর্তের জন্যও অমনোযোগী নন। অর্থাৎ সরলপথ প্রাপ্ত আল্লাহর অলিদের এবং তাদের অনুসারীদের উপর রাসুল (সাঃ) কে মহান আল্লাহ পরিপূর্ণভাবে খাস খেয়াল রাখতে বলেছেন কেয়ামত পর্যন্ত কারণ রাসুল (সাঃ) তো সব যুগেই হাজির ও নাজির।
হযরত জালালুদ্দিন রুমী (রঃ) বলেছেন, “সৎ লোকের সঙ্গ তোমাকে সৎ বানাবে আর অসৎ লোকের সঙ্গ তোমাকে অসৎ বানাবে”। তিনি আরো বলেছেন, “তাজা আনার যেমনভাবে বাগানকে তরতাজা করে দেয়, তেমনিভাবে কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার সংসর্গ তোমাকে আল্লাহর অলি বানিয়ে দেবে”।
খোদায়ী বিধানে জ্ঞান অর্জন ফরয হওয়ার কারণে বাতেনী বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য কামেলে মোকাম্মেল মুর্শিদের কাছে যেয়ে বায়আত হওয়া ফরয- এটা পরিপূর্ণ ভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল। তাছাড়া আমাদের পূর্বপুরুষ এবং নারীগণ তো এই তরিকারপন্থী তাছওয়াফ জ্ঞান সম্পন্ন পীর বা অলি-আল্লাহ (রঃ) গণের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। কাজেই তরিকা বা বায়আত গ্রহণকে অস্বীকার করা অজ্ঞতা ও বদনসীবিই বটে। তরিকা বা বায়আত অস্বীকারকারীদের পবিত্র কুরআনের নিম্মোক্ত আয়াতটি খেয়াল করা উচিত-
أَفَتُؤمِنونَ بِبَعضِ الكِتٰبِ وَتَكفُرونَ بِبَعضٍ فَما جَزاءُ مَن يَفعَلُ ذٰلِكَ مِنكُم إِلّا خِزىٌ فِى الحَيوٰةِ الدُّنيا وَيَومَ القِيٰمَةِ يُرَدّونَ إِلىٰ أَشَدِّ العَذابِ وَمَا اللَّهُ بِغٰفِلٍ عَمّا تَعمَلونَ ُ
অর্থ: তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এমন কাজ করে পার্থিব জীবনে তাদের শাস্তি লাঞ্ছনা ছাড়া আর কি হতে পারে? আর কেয়ামতের দিনে তাদেরকে আরো কঠোর শাস্তির দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যা করে আল্লাহ তা জানেননা তা নয়। (সূরা বাকারা, আয়াত-৮৫)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ চান সত্যপথ অন্বেষণকারী বান্দারা কুরআনের আলোকে রাসুলেপাক (সাঃ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলাম গ্রহণের বায়আত গ্রহণ করে পরিপূর্ণ ভাবে মুসলমান (বিশ্বাসী বা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী) হয়ে মানব জন্মকে ধন্য করুক। অন্যথায় মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য যারা আল্লাহকে ভয় করলো না আর বায়আত হয়ে পরিপূর্ণ মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করলো।
সূরা আল-ইমরান
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقاتِهِ وَلا تَموتُنَّ إِلّا وَأَنتُم مُسلِمونَُ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো আর কখনো পুরোপুরি মুসলমান (আত্মসমর্পণকারী ইসলামের বায়আত গ্রহণের মাধ্যমে) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১০২)
বায়আত গ্রহণের ব্যাপারে হযরত ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত সহীহ হাদিসে রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন-
অর্থ: যে ব্যক্তি বায়আতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেলো সে জাহেলী যুগের মানুষের মতো বেইমান অবস্থায় মারা গেলো। (মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা, হাদিস-১৮৫১; মেশকাত শরীফ, দেওবন্দ এর ছাপা ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদিস-৩৬৭৪; ইমাম বায়হাকী, সুনানুল কুবরা কিতাব এর হাদিস-১৬৬১১২)
সহী হাদিসে উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “আমরা রাসুলেপাক (সাঃ)-এর হাতে বায়আত হলাম এ মর্মে যে, আমরা শুনবো ও মানবো (আল্লাহর হুকুম), সংকটের সময় ও সাচ্ছন্দের সময়, অনুরাগে ও বিরাগে এবং আমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দিলেও। আর এ মর্মে যে, আমরা যোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্ব বরণ করে নিতে কোনরূপ কোন্দল করবো না। আর এ মর্মে যে, আমরা যেখানেই থাকবো হক কথা বলবো। আল্লাহর ব্যাপারে কোন র্ভৎসনাকারীর র্ভৎসনাকে ভয় করবো না।” (মুসলিম শরীফ, হাদিস-৪৬১৬; বুখারি শরীফ, হাদিস-২১০, সম্পাদনা-এম.এ জলিল)
হযরত আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত বুখারি শরীফে অপ্রাপ্ত বয়স্কের ইসলাম গ্রহণের বায়আতের বৈধতার দলিল পাওয়া যায়।
একটি ইহুদি বালক নবী করিম (সাঃ)-এর খেদমত করতো। সে অসুস্থ হলে রাসুল (সাঃ) তাকে দেখতে যেয়ে শিয়রের নিকট বসে বললেন- তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। ছেলেটি তার পিতার দিকে তাকিয়ে তার মতামত জানতে চাইলে সে বললো- আবুল কাশেম, রাসুল (সাঃ) যা বলেছেন তুমি তাই কর। ছেলেটি ইসলামের বায়আত গ্রহণ করলো। রাসুল (সাঃ) বললেন- সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাকে (আবুল কাশেম) দোজখ হতে রক্ষা করলেন। (বুখারি শরীফ, হাদিস-৫৫, সম্পাদনা-এম.এ. জলিল)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বুখারি শরীফে রাসুল (সাঃ)-এর নিয়োগকৃত আমীরের (শাসনকর্তা) আনুগত্যের বায়আত সম্পর্কে উল্লেখ আছে।
রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করলো সে আল্লাহর নাফরমানী করলো, যে ব্যক্তি আমার আমীরের নাফরমানী করলো, বস্তুত সে আমারই নাফরমানী করলো”। (মুসলিম শরীফ; বুখারি শরীফ, হাদিস-২০৮, সম্পাদনা-এম.এ.জলিল)
হযরত আনাস (রাঃ) কর্তৃক বুখারি শরীফে শাসনকর্তা কালো হাবশী হলেও তার আনুগত্য করার ব্যাপারে রাসুলেপাক (সাঃ)-এর আদেশ রয়েছে বলে উল্লেখ আছে।
রাসুলেপাক (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের উপর কিশমিশের ন্যায় মাথা বিশিষ্ট হাবশী গোলামকে আমীর (শাসনকর্তা) নিয়োগ করা হলেও তোমরা তার হুকুম শোন এবং তাকে মান্য কর”। (বুখারি শরীফ, হাদিস-২০৯, সম্পাদনা-এম.এ. জলিল)
বায়আত গ্রহণ করে মুসলমান হবার পর তা যে রক্ষা করবে তার সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
بَلىٰ مَن أَوفىٰ بِعَهدِهِ وَاتَّقىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ المُتَّقينَُ
অর্থ: যে ব্যক্তি স্বীয় অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে এবং তাকওয়ার নীতি (খোদাভীরুতা) অবলম্বন করেছে, নিশ্চয়ই সে আল্লাহর পছন্দীয়। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-৭৬)
পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, আল্লাহকে পেতে হলে নিঃসন্দেহে রাসুল (সাঃ) কে ওসিলা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ রাসুলেপাক (সাঃ) সকল ওসিলার অর্থাৎ অলি-আল্লাহ বা কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার আবার ওসিলা। অর্থাৎ ওসিলাগণেরও ওসিলা। তাই বর্তমানে রাসুল (সাঃ) কে পেতে হলে কোন সহী সিলসিলার কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়াকে ওসিলা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু শেষ জামানা চলছে এবং এ জামানাতে নক্শবন্দি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার একজন কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার হুকুমাত চলমান, তাই আমাদের নক্শবন্দি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার সঠিক সিলসিলার যিনি হায়াতে মোজাদ্দেদ বা কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়া তাঁর কাছে তওবা পড়ে কালেমা পাঠ করে বায়আত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হতে হবে। এটা সকল ফরযের ফরয, কারণ এ ফরয সঠিক ভাবে পরিপালন না করলে অন্য ফরযগুলো সহী ভাবে পালন করা সম্ভব নয়। এজন্যই ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যার প্রথম ভিত্তি ঈমান আনা, যা শেষ জামানার মোজাদ্দেদ কামেলে মোকাম্মেল আউলিয়ার কাছে বায়আত হওয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়।